বিবর্ণ সেই অতীত

গভীর মনযোগ দিয়ে পড়ার টেবিলে বসে পড়তেছি। ছোটবেলা থেকে পড়ালেখার প্রতি মনযোগী না হলেও ছাত্র হিসেবে খারাপ ছিলামনা। প্রত্যেক ক্লাশেই প্রথম অথবা দ্বিতীয় স্থান আমার দখলেই থাকত। ২০০৬ সালের ১৫ মে সন্ধায় পড়ার টেবিলে বসে হঠাৎ দরজার দিক থেকে আসা হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম। পেছনে ফিরে দেখি সানজিদা। এবার সাথে ওর বড় বোন সারমিনও এসেছে। কি আর করা! ওদের সাথে গল্প জুড়িয়ে দিলাম। আমি আবার এসবের পাল্লায় পড়লে লেখাপড়া গোল্লায় যাক তার চিন্তার ধার ধারেও ছিলামনা কোন কালেই। প্রথম সাক্ষাতেই সানজিদার সাথে আমার বেশ ভাব জমে উঠে। আমরা ঠিক করলাম আগামীকাল দুজনে অপরূপ সাজে সজ্জিত বিলে শাপলা তুলতে যাব। ওকে নিয়ে দিনভর শাপলা তোলার ইচ্ছায় কোসা নৌকা নিয়ে দুজনেই বাড়ির পাশের বিলে রওয়ানা দিলাম। আশেপাশে নানা রঙ্গের শাপলার সমাহার। অনেক শাপলা নিয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরলাম। তারপর এত এত শাপলা দিয়ে কি করা হল কিছুই জানতে পারলামনা। তবে গল্পে গল্পে সানজিদার কাছ থেকে জানতে পারলাম ওগুলো দিয়ে নাকি খুব সুন্দর করে মালা তৈরি করছে। পরের দিন বিকেলে ওর সাথে অন্যরকম মজা করা হল। আমি তখন ওকে মেজিক দেখানোর ইচ্ছায় আমার পায়ের পাতা আমগাছের ডালে বাজিয়ে ঝুলছি ঠিক বাদুরের মত। হঠাৎ পা ফসকে পড়ে যাওয়ায় আমার হাটুর নিচের অংশের অনেক খানি জায়গা ছুলে গর্ত হয়ে যায়। এতে সানজিদা ভীষণ বিচলীত হয়ে যায়। মজার ব্যপার হল বিষয়টি ও বেমালুম ভুলেই যায় যা আজও আমার মনে আছে সাথে সেই চিহ্নও। দিনের পর দিন আমাদের বন্ধুত্ব ও ভালবাসার তীব্রতা বাড়ছিল।অনেকদিন পর..
এবার অনেকদিন থাকবে ভাবে বুঝলাম। সানজিদা আসাতে ওর সাথে বেশ ভালই ভাব জমছিল। একদিন ওকে নিয়ে আমাদের বাড়ির অদূরের ব্রিজে প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য দেখতে গেলাম। পানকরি মাছ ধরার দৃশ্য, মাছরাঙ্গার শিকারের অপেক্ষায় অধির আগ্রহ নিয়ে বসে থাকার দৃশ্য, বউ-ঝিদের কলসি কাখে পানি নেওয়ার দৃশ্য, ছোট ছেলে-মেয়েদের সাঁতার কাটার দৃশ্য, রাজহাস আর খল্লা মাছের খেলা দেখতাম জম্পেস বসে। তখন ওর সাথে ফটোসেশনও করা হয়। নদীর পাড় দিয়ে ঘুরে ঘুরে আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমা। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে এলে বাড়ি ফিরে আসলাম। ও আমাদের এলাকার প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলি- ‘আমাদের এলাকার চারদিকে মাছরাঙ্গা, টুনটুনি, ঘুঘু, ডাহুক, বাবুই, শালিক, দোয়েল, পাপিয়া প্রভৃতি পাখির কলকাকলি, নদীর কুল কুল ধ্বনি, পাতার মার্মর শব্দ, শ্যামল শস্যের ভঙ্গিময় হেলাদোলায় মন ভরিয়ে তুলে। বিল-ঝিলের কাকচক্ষু জলে ঢ্যাপ, শাপলা-কমল-কলমির ফুটন্ত মুখগুলো ভরে আছে ¯িœগ্ধ লাবণ্যে। যেদিকে তাকাই, দেখি আলোকিত আকাশ, পাই সুরভিত বাতাস।
গ্রীষ্মের আকাশে গনগনে সূর্য-রোদ্রতপ্ত দিন। কৃষকেরা প্রত্যাশার দৃষ্টি-কখন বৃষ্টি নামবে, মাটির তপ্ত বুক জুড়াবে। বর্ষায় গায়ে গা ঘেঁষে হাঁটুজলে দাড়িয়ে থাকে ধান-পাটের বাড়ন্ত শিশুরা। এখানে মেয়েরা রঙ্গিন বেত দিয়ে বোনে শীতলপাটি। কলসি-কাঁখে নদী থেকে পানি আনে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে আঁচলে ছেঁকে ছোট ছোট মাছ ধরে। ইছামতি, পোড়াগঙ্গা, ধলেশ্বরী, পদ্মা, মেঘনা নদীর বাঁকে বাঁকে জেলেদের গ্রাম। নৌকা আর জাল নিয়ে সারাদিন তারা নদীর বুকে ভেসে বেড়ায় আর মাছ ধরে। পদ্মা-মেঘনায় ধরা পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। সুনিবিড় ছায়াঘেরা আমাদের গাঁয়ের পাশ দিয়ে শরতে-হেমন্তে নদীর বুকের চরে গজায় কাশ ও শরবন। শীতকালে জমে উঠে পিঠাপুলির উৎসব। মাঠে মাঠে রাখালেরা গরু চরায়। এ অঞ্চলের উর্বর মাটিতে ফলে নানা রকমের গোল আলু, গম, আখ প্রভৃতি। মৃৎশিল্পীরা মালসা, রসের ঠিলি, দইয়ের তেলাইন, খাঁসা, মাটির ব্যাংক প্রভৃতি তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকে। কামার সম্প্রদায় দা, বটি, টেডি, খুন্তি, ছেনি, হাসুয়া, ফুলকুচি ইত্যাদি তৈরি করে। তাছাড়া এই অঞ্চলে কিছুটা মানসম্পন্ন সুতার শিল্প, মুদ্রণ শিল্প, কুটির শিল্প, বেকারী শিল্পও গড়ে উঠেছে। বিক্রমপুরের শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্য পাতক্ষীরসহ মিষ্টি, দই, ছানা, রসমালাই ও আমৃত্তি বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকে এই অঞ্চলের ঘোষ পরিবারেরা। সাধু, ফকির, মস্তান, সাধক শ্রেণীর ব্যক্তিরা ভাদ্র মাসের বৃহস্পতিবার রাতে ঢোল বাজনার আওয়াজের তালে তালে ভেলা ভাসানোর উৎসবে মেতে উঠে। এছাড়া রথ উৎসব, খোদাই সিন্নি উৎসব, ঈদ মেলা, বিভিন্ন পূজার মেলা, বৈশাখী মেলা, নৌকা বাইচ মেলা, মনষা মেলা, দশমী মেলা, কৃষি মেলা, বইমেলা, নবান্ন উৎস প্রভৃতিতেও আপামর জনতা আনন্দে মেতে উঠে। এই এলাকার মানুষ সময় পেলেই সাঁতার বাইচ, নৌকা বাইচ, অলডুবানি, ষাঁড়ের লড়াই, পলানটুক, কুমীর ডাঙ্গা, কুস্তি প্রভৃতি খেলায় মেতে উঠে। কিছু বিয়ের মধ্যে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পালকির প্রচলনও প্রত্যক্ষ করা যায়। শীতকালে গভীর রাতে ওয়াজ মাহফিলের সাথে পাল্লা দিয়ে বয়াতী গানের আসরও বেশ জমে উঠে। কাজের অবসরে টেকের হাটে বসে লালন গানের আসর। শখের বশবর্তী হয়ে এই অঞ্চলের মানুষ পান চাষ করে। কর্মজীবনের ব্যস্ততার মাঝে সপ্তাহ শেষে পদ্মা নদীর চরে গড়ে উঠা মনোমুগ্ধকর পদ্মা রিসোর্ট দেয় প্রকৃতির স্বাধ। সব মিলে আমাদের বিক্রমপুর যেন এক মহান শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক অতুলনীয় ছবি। ’ একথা শুনে সানজিদা মুগ্ধ হয়ে গেল।

এর মাঝে ও আমার খোঁজ নিত কোথায় আছি। বেশিরভাগ সময় আমি যখন পড়তে বসতাম তখন আমার রোমে ওর হঠাৎ আগমন ঘটত। ও গল্প কবিতা পড়তে বেশ পছন্দ করত। আমি কিশোর কন্ঠ পড়তাম তাই ওকেও তাই পড়তে দিতাম। খুব মজা করেই পড়ত। যখনই আসত সাথে নতুন নতুন সংখ্যা ওর জন্য সর্বরাহ করতাম। ওর পরিচয় দিতে ভুলে গেছি ও হচ্ছে ঘাসভোগ গ্রামের আমার এক প্রিয় ভাগনী। প্রায়ই স্মৃতি বিজড়িত ঘটনাগুলি জীবন্ত হয়ে ধরা দেয় আমার মনে। ওর সাথে একটি পর্যায়ে অনেক গভীর বন্ধুত্ব হয়ে উঠে আমার। দুজনেই লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করি। ওর বাড়ি অনেক দূর। ইচ্ছা থাকলেও দেখা করার উপায় ছিলনা। শুধু ওর কথা ভাবতাম আর কবিতা লিখতাম। এক সময়ে ভাবলাম ওর সাথে আমার আর দেখা হবেনা। শুধু শুধু ওকে ভেবে কষ্ট পেয়ে লাভ নেই।

কয়েক বছর পর…
আমার চাচাত বোন আলেয়ার বিয়েতে আসছে দেখলাম। ওকে দেখেই মনে পড়ে যায় বিবর্ণ সেই অতীত। অতীতের অনেক স্মৃতি বার বার দোলা দিয়ে যাচ্ছে স্মৃতির জনালায়। এবার সানজিদা অনেক বড় হয়েছে কিন্তু আমার সাথে দেখা করেনি ভাবলাম হয়ত আমাকে ভুলে গেছে। তারপরও কয়েক বছর কেটে গেল। এর ভিতরে আর ওকে দেখিনি। ওকে সব সময় মিস করছি ও আমাকে মিস করছে কিনা জানিনা। কোন এক বিকেলে পড়ার টেবিলে বসে ওর কথা মনে পড়ায় কাকতালিয়ভাবে হঠাৎ ওর মত কাউকে দেখতে পেয়ে গলা হাকিয়ে ডাকলাম। দেরি না করে আমার ডাক পেয়ে একদম কাছেও চলে আসল। আনন্দভরা বাড়িতে সুন-সান নিরবতা। কিছুক্ষণের গল্পের ফলশ্রুতিতে আমাদের আগের বন্ধুত্ব সম্পর্কে ফিরে এল।
দীর্ঘদিন পর ওকে কাছে পেয়ে আমার কেমন আনন্দ লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা একদম। এই অনুভূতির সাথে জড়িয়ে আছে ওর সাথে অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া ধূসরস্মৃতি। ওকে দিয়ে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা করিয়ে আমি রীতিমতো অনেক ছবি তুললাম। যা বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অবশ্য সানজিদা ও আমি সেই পত্রিকা নিয়ে খুব মজা পেয়েছি। সানজিদা যে কদিন আমাদের বাড়িতে ছিল প্রতিদিন বিকেলে আমরা গল্প করতাম। একদিন দেখি ওর মনটি খুব খারাপ যখন আমি ওর ছবি যে পত্রিকায় বের হয়েছে তার কপি আনতে যাচ্ছি। পরে জানতে পারলাম আমি ওইদিন ওর সাথে গল্প করিনি বিধায় মনটি খারাপ ছিল। জানতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হল এই ভেবে যে আমিই শুধু ওকে ভালবাসিনা আমাকেও সে ভালবাসে।

ভূতের রাজ্য

গভীর ভুতুরে বনের ভেতর এত সুন্দর পুরাতন রাজভবন দেখে সবাই থ হয়ে গেলাম। বিকট আওয়াজের সাথে সাথে সহসা ফটক খুলে যাওয়ার অদ্ভুত দৃশ্য। কিছুক্ষণ আমরা ইতিউতি তাকালাম। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে গেলো। আমাদের অন্তরাত্মা শুকিয়ে কাঠ। ভয়ে আর বিস্ময়ে সবার শরীর যেন হিমশীতল হয়ে গেল। কারো মুখে কোনো কথা নেই। মাঝে কোটাল হিসেবে এক অপরূপা ডানাকাটা পরী দাড়াঁনো। স্বর্গের অপ্সরা দেখিনি, হয়ত এমনই হবে। তার কুহকে আমি আটকা পড়ে গেলাম।
পরীর ধবধবে আলোর সরপোশে পুরো পৃথিবী যেন বন্দী হয়ে গেছে। অভ্যাগত দেখে মাথা নেড়ে হাত বাড়িয়ে আমাদেরকে ভিতরে আসার সাদর আমন্ত্রণ জানাল। জংলা জায়গাটা নির্জন-বিজন হওয়ায়; ভূতের ভয়ে অনেকেই পড়িমরি দে ছুট! কেউ না গেলেও আমি একদম লোভ সংবরণ করতে পারলামনা। ওদিকে বন্ধু হাবিব বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মানা করলেও আমলে নিলাম না। আমি পরীর হাত ধরে ভেতরে আসতেই আচানক ফটকটি বন্ধ হয়ে গেল। এতক্ষণ ভয় কাজ না করলেও এখন তা হারে হারে টের পাচ্ছি। বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার সমেত বলবত্তর সান্ত্রীরা দাড়িয়ে গেল। কেউ কোন টুঁ শব্দ ও একদম নড়াচড়া করলনা। আমি ডানপিটে হলেও মনের রাজ্যটি অনেক অজানা শঙ্কা ও ভয় নামক ভূতেরা দখল করে নিল। সামনে পদসঞ্চার করতেই দেখা গেল তখতে তাউসে উপবিষ্ট বিশাল কলেবরে এক রাজা। পরীটি কোন কথা না বলে আমার হাত ধরে সামনে আগাচ্ছে। পরীর হাতের ছোঁয়ায় এক অন্যরকম আবেশ তৈরি হলো আমার মনে। আমরা মালঞ্চের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। বিচিত্র ফুলের ঘ্রাণে মাতাল হল আমার হৃদয়। অদূরেই দাড়িয়ে আছে চোখ জুড়ানো মন কাড়ানো নানা রঙবেরঙ্গের বিশাল বিশাল দালান-কোঠা। রাজ্যটিকে এক কল্পপুরী মনে হল। পরী আমাকে নিয়ে জোরছে হাটছে। কী উদ্দেশ্যে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বলছেনা। পরীর কাছে ধরাশায়ী হয়ে মতিচ্ছন্ন হলেও হিম্মত সঞ্চার করে একবার চারদিকে ঝটিতি চোখের সার্চলাইট বুলাইয়া লইলাম। ওদের রাজ্যের একমাত্র বদ্যির কাছে আমাকে সমর্পণ করেই পরী হাওয়া। তারপর কি হল কিছুই খেয়াল নেই।
জ্ঞান ফিরার পর আমি পুরাতন অট্টালিকার সরু গলিতে ভূতুরে অন্ধকারের ভেতরেই আনমনে হাঁটছি আর হাটছি। আশপাশে ভূতুরে জঙ্গল দেখায় ভয়ে গা ছমছম করে উঠল। কিছুদূর যেতে না যেতেই আচমকা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠা আগুনের রুমে ঢুকে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম।
কিম্ভূতকিমাকার দশাসই চেহারার এক ভূতের উদয় হল আমার সামনে। হঠাৎ বাজখাঁই রকমের আওয়াজ ছাড়ল। আমি ভেবেই নিলাম একদম তাদের রাজ্যের গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছি। নিজেকে শত চেষ্টা করেও ভূতের নিগড় থেকে বের করতে পারছিনা। ভয়ে জড়সড় হয়ে কথা বলা শুরু করে দিলাম ভূতের সাথে। আমার কথা ভাল লাগায় কোনো ক্ষতি করল না।
অনেকদিন ভূতটির সব অদ্ভুত কর্মবিধি পর্যপেক্ষণ করলাম। একদিন বিশাল বড় এক কড়াই নিয়ে কয়েক টন তেল ঢেলে চুলায় আগুন দিয়ে গরম করছে। আর অনেক উঁচুতে দুই গাছের সাথে ডাল বেধে ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করছে। উদ্দেশ্য অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া। বুঝা গেল ভূতটি দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। সে অনেক বিশাল কাহিনী এখানে বলা অবান্তর। একপর্যায়ে তার সাথে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। তাদের রাজ্য ঘুড়ে দেখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করায় আমাকে মাটির নিচে একটি সুরঙ্গপথ দেখিয়ে দিল। বিদায় মুহূর্তে বলে রাখল বিপদ ঘটলে আমার নাম বলবে তখন সব ঠিক হয়ে যাবে। তার নাম শুললে সবাই ভয়ে থরথর করে কাঁপে। এমনকি রাজাও তাকে শাস্তি দিতে ভয় পায়। তার নামটিও বেশ অদ্ভুতÑ হাওরং। আমি এঁদো গলিতে মশাল হাতে অসিম সাহস নিয়ে হাটছি। একটিই আমার উদ্দেশ্য, ভূত কোথায় থাকে, কিভাবে থাকে, কী খায় ও কী করে তা নিজের চোখে দেখা। সামনে আগাতেই ইয়া বড় এক ছাদ দেখতে পেলাম। ধারণা করলাম ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান এমনই হবে। নিচেই অনেকগুলো ভূত একসাথে বসে আছে। অনেকগুলো চিৎকার-চেচামেচি, হুড়োহুড়ি করছে। অনেকগুলো আমার দিকে তেড়ে আসছে। সসঙ্কোচে বন্ধুর নাম বললাম। তারাও আমাকে কিছু করলনা। ওদের রাজ্যে অতিথিদের তুলসীপাতা দিয়ে আপ্যায়ন করে। আমাকে এক ভূত অনেকগুলি তুলশিপাতা এনে দিল। আমি কাচাই কচকচ করে চিবিয়ে খেলাম। কষ্ট ও ঘৃণাবোধ কিছুই কাজ করছিলনা তখন। তুলসীপাতা ভুঞ্জন শেষে কোথা থেকে যে হাতে এসে হাড়গোড় জমা হলো তা টের না পেলেও ভয় ঠিকই পেলাম। নিয়ম হল এগুলি তাদের কবরে রেখে আসতে হবে। কবরটি ভূতের আস্তানার একসাগর পরেই। আমি সাগর পার হয়ে তাদের কবরে পৌঁছলাম। ঠিক আমাদের মতোই কবর। তবে কোনো মাটি নেই সবকটি পাকা করা। কবরস্থানে গিয়েই বিভিন্ন ধরনের অদ্ভুত শব্দ ও গুমরে কাঁদার আওয়াজ কর্ণকুহরে পৌঁছল। আমি হাড়গোড় রেখে ওদের রেস্ট হাইজে গিয়ে বসলাম।
একটি প্রবেশদ্বার ছাড়া আলো-বাতাস ঢোকার মতো কোন বাতায়ন-ঘুলঘুলি লক্ষ্য করা গেলনা। অনেক দিন হল কোন ঘুম নেই। এখানে অবস্থান নেয়ার পর কেন যেন খুব করে ঘুম পেয়ে বসল। কোথা থেকে উৎকট হৃদয় নাড়ানো ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে তড়াক করে উঠে বসলাম। সেই নগরের কোটাল পরীর দেখা পেয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। পরী আমাকে সাগরের কিনারে নিয়ে গেল। দুজনেই জম্পেশে বসে মাছের খেলা ধুলা উপভোগ করতে লাগলাম।
আমার ইচ্ছা জাগল পরীর মতো নীল আকাশে উড়তে। তা কি সম্ভব? মানুষের ঘ্রাণ পেয়ে একদল কবর রক্ষী ভূত গিলোটিন নিয়ে আমাকে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ঘোর বিপদের মুহূর্তে ভূত বন্ধুর নামটি বেমালুম ভুলে গেলাম। পরী আমাকে দুটি পাখনা দিয়ে চলে গেল। আর ফিরে এলো না।
পরীর সাথে এটিই শেষ দেখা হবে আমি কল্পনাও করিনি। মানুষের চেয়েও মোটা মোটা তীর আমার দিকে তাক করে আছে ভূতের কমান্ডো বাহিনী। আমি তো ডানপিটে দমবার পাত্র নই! ওদের তীর আমার দিকে আসতেই খপ করে ধরে ওদের দিকেই ফিরিয়ে দেই। আমার দেয়া তীরে ওদের অনেকে ধরাশায়ী হয়ে তড়পাতে থাকল।
অনেকেই মারা পড়ল। ভূতদের অবস্থা বেগতিক দেখে ওদের আস্তানায় খবর পাঠায়। দলে দলে ভূত আসতে দেখে পরীর দেয়া ডানা মেলে দিলাম নীল আকাশে ঝাঁপ। এবার সত্যি সত্যি আমি আকাশে উড়ছি। পরীর রাজ্যে ফিরে যাবো। ভাবছি আর পুলকিত হচ্ছি। মায়ের ডাকা ডাকিতে ঘুম থেকে উঠলাম। মনে মনে ভাবলাম ইশ! মা তুমি আমার স্বপ্নটাই শেষ করে দিলে। ফজরের নামাজ শেষে মাকে স্বপ্নে যা যা দেখছি আদ্যোপান্ত খুলে বললাম।
সিরাজদিখান, মুন্সিগঞ্জ
(২৬ ডিসেম্বর ২০১৩, বৃহস্পতিবার) গল্পটি নয়াদিগন্তে প্রকাশিত। এটি আমার লেখা ২য় গল্প।

পাথরঘাটা এবং তাসনীম

ফোনে আশরাফের কথা শেষ হতে না হতেই বিছানা থেকে তড়াক করে উঠে তাসনীম। না খেয়েই ঝটপট সেজেগুজে বের হয়। আকাশে মেঘ জমেছে। যে কোন মুহূর্তে বৃষ্টি নামতে পারে। এখন কী করবো? কিভাবে যাবো? নাহ কথা দিয়েছি যেতেই হবে। তার সাথে দেখা করতেই হবে। পাথরঘাটা যাওয়ার ব্যাপারে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল তাসনীম।
আশরাফ কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে সামনে দিয়ে বয়ে চলা নদীর দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে। আজ স্বপ্নঘেরা কাঙ্খিত সেই দিন। ভাবতেছে প্রিয়া কখন আসবে। কখন দেখা হবে। অপেক্ষার প্রহর যেনো শেষ হতে চায় না।
তাসনীমকে দেখে মনে হচ্ছে যেনো গোলাপ কাননে সদ্য গজানো ফুলের কলি। তরতাজা লাল গোলাপের দীপ্তি অঙ্গজুড়ে। বেশ আকর্ষণীয়, অপূর্ব সুন্দরী, প্রখর মেধাবী। সে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
আশরাফ প্রখর মেধাবী। ওর দক্ষতা, যোগ্যতা ও মেধার কারণে এলাকার বিভিন্ন সামাজিক, অনুষ্ঠানে যেতে হয়। এভাবে কোন এক অনুষ্ঠানে তাসনীমের সাথে আশরাফের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কটা এমন, যেনো বিনিসুতার মালা। কেউ কাউকে ছাড়তে পারেনা। একজনকে ছাড়া অপরজনকে কল্পনাই করা যায় না। দু’জনের মাঝে বয়সের সামান্য পার্থক্য থাকলেও মনের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
তাসনীম পাথরঘাটায় এসে একগাল হাসি দিয়ে আশরাফকে উষ্ণ অভিবাদন জানায়। এমন হাসি মুখের দিকে সারা জীবন চেয়ে থাকা যায়, এই হাসি জীবনেও ভোলা যায় না। আশরাফ ওর হাতে একটি গোলাপ দিয়ে বলল, ‘আই লাভ ইউ’। তাসনীম লজ্জা পেলো। ও আশরাফের গালটা ছুঁয়ে বলল, আমিও। সেকেন্ডের একটি স্পর্শ আশরাফের সূক্ষè অনুভূতিকে ভীষণভাবে নাড়া দিল। আশরাফও লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে আছে। দুরুদুরু বুকে তাসনীমের হাত ধরে। এই প্রথম কোনো নারীর হাত ধরে, পাশে বসে, গন্ধ শুঁকে, ছুঁয়ে দেখে আশরাফ।
এই পাথরঘাটা তাদেরকে স্বচ্ছ অতীতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দূর্বার গতিতে। মনে পড়ছে এর আগে ২ বার এখানে আসার বিষয়টি। প্রায়ই স্মৃতি বিজড়িত ঘটনাগুলি জীবন্ত হয়ে ধরা দেয় তাদের মনে।
ঈদের পর দু’জনের সাক্ষাৎ হওয়ায় একে অপরকে বখশিশ দেয়। সাথে নীল খামের চিঠিও। দু’জনে মনের আনন্দে হাতে হাত রেখে হাটতে থাকে। নদীর পারে সাদা সাদা কাশফুল, সাড়ি সাড়ি ইঞ্জিন চালিত নৌকা, জেলেদের মাছ ধরা, পানকড়ির মাছ শিকার, দক্ষিণের দিকটায় বসে থাকা মাছরাঙাটির টুইট টুইট শব্দ, নদীর উপর নীল আকাশে রংবেরঙ্গের পাখি উড়া, উথাল-পাথাল ঢেউ এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও রূপলাবণ্য দেখে দু’জনই মুগ্ধ। ওপাড়ে দেখা যাচ্ছে বিস্তীর্ণ প্রান্তর। ধানের শীর্ষে মৃদু দোলা দিয়ে যাচ্ছে স্বর্গীয় বাতাস। দেখে মনে হচ্ছে কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা বিমূর্ত ছবি। পাঁকা ধানের গন্ধে ভরে গেছে চারপাশ। গ্রীষ্মের চিরচেনা রূপ অকৃপণভাবে বিলিয়ে দিচ্ছে এ ধরায়। দু:খভরা যে কোনো মানুষ যদি প্রকৃতির এ রূপে অবগাহন করতে পারে পরিপূর্ণভাবে, তাহলে তার দু:খ কষ্ট উধাও হয়ে যাবে। সেখান থেকে চলে আসার পর দু’জনেই ভাবল বেশ ভালই কাটছিল মুহূর্তগুলো। তখনও আশরাফ বুঝতে পারেনি সামনে কতটা অমসৃণ পথ অপেক্ষা করছে।
একদিন স্বপ্নে দেখি তাসনীম আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসছে। খুশিতে আমার শরীর কাঁপতে শুরু করল। সন্ধায় পেয়ারা গাছের নিচে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওর সাথে অনেক গল্প করলাম। রাতে আমার রুমেও নিয়ে গেলাম। যেখানে আমি পড়াশুনা ও সাহিত্যচর্চা করি সেখানে। খাটের উপর বসে দু’জন চুপচাপ একে অপরের দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে আছি। কেমন যেনো এক ভাল লাগার মতো অন্ধ আবেগ। আমরা মুহূর্তে ভুলে গেলাম পৃথিবীর সব ক্লেদ ঘৃণা। ভালোবাসায় সিক্ত হলাম। কিন্তু জীবন যেনো কেমন। মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। ৫ মিনিট পর বেরিয়ে আসি বিড়াল পায়ে গলাগলি করে। তাসনীম আমার বুকে হাত রেখে কথা দিল আমাকে কোন দিন ভুলবেনা, কষ্ট দিবেনা ও যত বাধাই আসুক আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। বাহির থেকে জানালা দিয়ে আমি আবারও গল্প জুড়ে দিলাম। এক পর্যায়ে কোনো কারণে তাসনীম কষ্ট পাওয়ায় আমার চোখের কোণে জমা থাকা ক ফোটা পানি মাটিতে পড়ল। কোন মেয়ের ভালবাসা অর্জনের জন্য জীবনে এই প্রথম কান্না। ও আমার চোখের জল আলতো হাতে খুব যতœ করে মুছে দিচ্ছে। আমাকে ক্ষমা করে দেয়ায় এবং তাসনীমের নরম হাতের ছোঁয়ায় কান্না থেমে যায়। তখনই বোঝলাম ও আমাকে কতটা ভালবাসে। ওর মার্জিত রুচি, তীক্ষœ বুদ্ধি, সংযত ভাষা, বিনীত ব্যবহার মোটকথা ওর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বে আমি সম্মোহীত হই। ওর গুণে মুগ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেই যে করেই হোক ওকে আমার জীবন সাথী করা চাই। দিনে কয়েকবার তাসনীম আমাকে ফোন দিত। সে কী মধুর আলাপ। প্রতি পরতে পরতে ভালোবাসার অপরূপ প্রকাশ। চিঠির মাধ্যমে আমরা একে অপরের কাছাকাছি আসতে পারা। মোবাইলের মাধ্যমে আমাদের আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা গভীর থেকে গভীরতর হওয়া। সেদিন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। ও সোজাসাপ্টা জবাব দিল তোমাকে আমি আজ থেকে মুক্ত করলাম, ছেড়ে দিলাম। ভিরমি খাওয়ার জোগাড়, হঠাৎ কি হতে কি হয়ে গেলো আমি কিছুই বোঝলামনা। চারদিক অন্ধাকার হয়ে গেলো। সুখের গগনে দেখা দিল কালো মেঘের ঘনঘটা। কষ্টে চোখ ভিজে গেলো। কী উত্তর দিবো? হারাবার ভয় আছে বলেই হয়ত পৃথিবী এত সুন্দর। আমি বললাম, পাওয়ার সুখের চেয়ে হারানো দু:খে ভালোবাসাকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করা যায়। সব অপ্রাপ্তি, অপূর্ণতা ও ব্যর্থতা সত্ত্বেও আমি হতাশ নই, কারণ আগুনের দরিয়া সাঁতরে স্বপ্ন সম্ভাবনার শান্ত-শীতল দীঘিতে অবগাহন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। অস্থির হৃদয়টা কেঁদে ওঠে তাসনীমকে নিজের করে পাওয়ার জন্য। কিন্তু চেষ্টার ফল ব্যর্থ ভেবে একাকিত্ব জীবন বেছে নেই। এর পর শেষ বারের মতো ওর সাথে দেখা করি। ওকে নিয়ে আমার রচিত একটি গল্প প্রিয়জনে প্রকাশিত হওয়ায় উপহার হিসেবে দিয়ে বিদায় নেই। কোনোমতে পরিবেশটা ম্যানেজ করে নিজের ভেতরের কষ্টকে দমিয়ে রাখি। আর পিছনে ফিরে তাকাইনি। অনেক মন খারাপ করে জনমের মত ওর ইচ্ছায় আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিটিকে বিদায় দিয়ে আসি। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে আমার বুক চিরে। মহা ধুমধামে ওর বিয়ের আয়োজন চলছে। ভালোবাসার মানুষটি বধূর সাজে অন্যের ঘরে চলে যাচ্ছে। ভাবতেই গা শির শির করে উঠে। শুধু ওর পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে আমার সুখকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছি। সত্যি আমি তাসনীমের প্রেমে এতটা পাগল ছিলাম যে, তখন ও যা বলতো আমার কাছে মনে হতো এটাই পৃথিবীর অনেক বড় সত্য। ভালোবাসা কী? আমি জানতাম না। আজ আমার মনে হচ্ছে ভালবাসা মানে দু’টি মনের মিলন। দু’টি দেহের একটি আত্মা! একই সাথে মিশে যাওয়া। আমি যে ওকে ছাড়া একটা দিনও থাকতে পারি না। সে কথা কি ও জানতো না। তবে কেনো চলে গেলো অন্যের কাছে এভাবে—
সেসব স্মৃতি আমাকে শুধু তাড়া করে বেড়ায়। রবি ঠাকুরের ভাষায়, সখি ভালোবাসা কারে কয়, সেকি শুধুই যাতনাময়। রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর কথায়, ভুলে যাবো বলে এত দূর আসা তবু ভুলে গেছি কিন্তু ভুলে থাকতে পারিনি।
ওকে ছাড়া আমার এ জীবন শূণ্য মরুভূমির মতো। ওর পাঠানো ইনবক্সে পুরনো এসএমএস পড়ি। চোখে জল ধরে। ঠোঁট কাঁপে। ভালোবাসার ফুলগুলো দাগ রেখে যায়। গল্প হয় অন্যের। রোমিও-জুলিয়েট, লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রাধা-কৃষ্ণ, কিংবা মমতাজ-শাহজাহানের মতো। প্রেম ভালোবাসা দিয়েই পৃথিবীতে এরা প্রিয়জনকে পাওয়া না পাওয়ার মাধ্যমে ইতিহাস গড়ে গেছেন।
সবই আছে স্মৃতির আঙ্গিনায়। শুধু তাসনীম নেই। অর্থহীন পড়ে থাকে জীবন। এখনও আমি খুঁজে বেড়াই ওকে আমার মাঝে। ওর দেয়া চিঠি ও ছবিগুলি বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকি। বিধাতার অমোঘ নিয়মকে মেনে নিয়েছি।
রাতে আশরাফের মন খারাপ দেখে বুঝতে পেরে ওর আদুরে ছোট বোন মাকছুদা জিজ্ঞেস করে, ভাইয়া তোমার কি হয়েছে আমার কাছে বল। অনেক পিড়াপিড়িতে বলতে বাধ্য হয়। ঘটনার বর্ণনা শুনে মাকছুদা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
আশরাফ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে। বিচ্ছিন্নতার নির্মম বাস্তবতা ওর কষ্টের মাত্রা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করছে না। সারাক্ষণ দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের ভেতর মনের মানুষকে নিয়ে গল্প লিখে আর শুয়ে থাকে। কারো সাথে কোন কথা বলে না। শুধু নির্জনে বসে তার অতীত স্মৃতি রোমন্থনে মগ্ন থাকে। কোনো কিছুই ওর চিন্তায় ছেদ পড়ছেনা।
ডাক্তার দেখানো হলো ওকে। ডাক্তার বলল, ছেলেটি মানসিক দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে। তাই ও রাতে ঘুমাতে পারে না। ঠিক মতো ঘুম না হলে কিডনির সমস্যাই বেশি হয় এবং অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে ও মারাও যেতে পারে। আশরাফ এখন যে অবস্থায় আছে, ও যেকোনো সময় স্ট্রোক করতে পারে।
অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে ও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। যে করেই হোক আশরাফকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। ডাক্তার উপদেশ দিয়ে চলে যায়।
মতিচ্ছন্নের মতো ভোঁভোঁ মাথায় কয়েকদিন এলোমেলো পথ খুঁজতে লাগল আশরাফ। একদিন ও কোথায় যেনো গেলো আর ফিরে এল না।

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, মাসিক বিক্রমপুর

আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব

বড় ভাইয়ের জুতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা কোথাও। তার চিৎকার-চেচামেচিতে আজ ঘুম থেকে একটু আগেই উঠতে হল। রীতিমতো আজও প্রথমেই মোবাইলটি চেক করি। সহসা মাথাটি চক্কর দিয়ে উঠল। বিছানা ছেড়ে তড়াক করে উঠে পড়লাম। অসংখ্য মিসড কলের মধ্যে শুধু সানজিদারই ১৩ টি। সাধারণত এতগুলি কল দেয়ার মানুষ সানজিদা নয়। নিশ্চয়ই আজ কোন বিপদ-আপদ পতিত হয়েছে, জরুরী প্রয়োজন অথবা কোন দু:সংবাদ আছে। অনেক অজানা সঙ্কা, ভয় নিয়ে কল দিতেই অন্য প্রান্ত থেকে জেদী ও অভিমানী কন্ঠ ভেসে উঠল। ৯ টা ৩০ মি. এর মধ্যে কুচিয়ামোড়া আসা চাই নয়ত তোমার খবর আছে। কথাটি বলেই সংযোগটি আচানক কেটে দিল। গোঁ ধরায় আমার কোন কথাই শোনলনা। প্রবোধ দেয়ার সময়, সুযোগ ও সাহস সবই হারিয়ে ফেললাম। ওর ছোট ছোট অভিমান, হাসি, কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে কথা বেশ ভাল লাগে। তবে আজ ভিরমি খাওয়ার জোগাড়; বোঝলামনা কি হয়েছে। কিছুদিন ধরে শুনছি ওকে ওই কলেজের ভিপি ডিস্টার্ব করে আসছে প্রতিনিয়ত। সেই চিন্তা-ভাবনায় আশা আর আশঙ্কার দোলাচলে উত্তেজনার পারদ উঠানামা করছে। যে করেই হোক আজ ওর আবদার রক্ষা না করে নিস্তার নেই।
কি আর করা ঝোঁকের মুখে ও আবেগের তোড়ে বাধ্য হয়ে ঝটপট প্রয়োজনীয় কাজ- গোসল, খাওয়া-দাওয়া সেরে, তৈরি হয়ে এক প্রিয় ভাই মাসুদকে নিয়ে মটর সাইকেল যোগে রওয়ানা দেই। গন্তব্যস্থলে নির্ধারিত সময়ে আগে ৯ টা ২০ মিনিটেই আমরা চলে আসি।
সানজিদার সাথে দেখা করার অভিলাষ বহুদিন ধরেই হৃদয়ে পোষণ করছি। কোন সময়-সুযোগ, কুল-কিনারা, উপলক্ষ খোঁজে পাচ্ছিনা। ঠিক হল আমার জন্মদিনে সাক্ষাৎ হবে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এবার আমার জন্মদিন উদযাপনই হয়নি শুধু ওর আম্মুর অসুস্থাতার দরুন। সানজিদা আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। বাবার বন্ধুর মেয়ে হওয়ার সুবাদে আমাদের বাড়িতে আসা যাওয়া। সেই থেকেই ওর সাথে বেশ সখ্য গড়ে উঠে আমার। বয়সের ব্যবধান হলেও সানজিদার সাথে আমার বেশ বন্ধুত্ব সম্পর্ক। ওকে এত বেশি ভালবাসি যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। সানজিদাও আমাকে এত বেশি মিস করে যা ব্যাখ্যা করা অনাহুত। ও ক্লাশের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী। সানজিদার কলেজের অধ্যক্ষসহ সমস্ত শিক্ষক ওকে ব্যাপক আদর-¯েœহ করে ভালবাসে। পরীবারের সবাই বুদ্ধিমতি হওয়ায় ওর প্রতি বেশ যতœবান। বন্ধুমহলেও বেশ জনপ্রিয়তা ও ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয় সানজিদার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের জন্য। ওকে একনজর দেখে যে কেউ চোখ ফেরাতে পারেনি এবং পারবেও না; আমার বিশ্বাস এমন। তাছাড়া অকৃত্রিম ভালবাসা, ¯েœহ-প্রীতি হৃদয় উজার করে দিবে বৈকি! যদিও খুব ফর্সা নয়। ওর নিটোল ধড়টি বেশ লম্বা নয়। চেহারায় যাদু আছে নি:সন্দেহে। মায়াবীনী ও উজ্জল শ্যামবর্ণের চেহারা। ওর কন্ঠে গান শোনলে যে কেউ পাগল হয়ে যাবে। বয়স বেশি নয়, মাত্র ১৭ বছর। মালখানগর কলেজের ইন্টার পরীক্ষার্থী। ওর এত রূপ ও গুণের অপূর্ব সমাহারের কারণে এত অল্প বয়সে এত মানুষের মন কাড়ছে যার ইয়ত্তা নেই। মাসুদ মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমার কথা শোনছে। কি আর করা ঘড়ির কাটা ঠিক জায়গায় এখনও নড়ছেনা, সানজিদাও আসছেনা। ওর প্রতি আমার হৃদয়ে অনেক টান, ভালবাসা, প্রীতি সেই ছোটবেলা থেকেই। বর্ষায় আমাদের বাড়িতে আসলে বিকেল হলেই দুজনে গল্প জুড়ে দিতাম। বিলের ধারেও নৌকায় চড়ে বেড়িয়ে পড়তাম রং-বেরঙয়ের শাপলা তোলতে। শাপলা দিয়ে কত কিসিমের যে আংটি, কানের দুল ও মালা গাঁথতে জানতো এক্ষেত্রে ওর জুড়ি মেলা ভার।
সন্ধায় পড়তে বসলেই দ্বিধাহীন চিত্তে গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিত। মাঝে মাঝে হিহি করে দুই গালে টোল নিয়ে নির্দ্বিধায় চলে আসত একদম আমার পড়ার টেবিলে। আমিও নিরুপায় হয়ে ওর সব কান্ড সহ্য করতাম। নিজেই আমার আর্ট পেন্সিল নিয়ে যাচ্ছেতাই আঁকিঝুকি করত। একদম আমার ন্যাওটা হয়েছিল বিধায় এমনটি করেছে, পরে বুঝেছি। আজ সেই মিষ্টি, আদুরে, চঞ্চল, মিশুক, সুবোধ ও প্রিয় মানুষটি অনেক বড় হয়েছে। আমাকে তিক্ত-বিরক্ত করতে ঘন ঘন বেড়াতে আসেনা। গল্প করেও সময় নষ্ট করে না। ফুরসৎ কই? নিজেই গল্প লেখা শিখেছে। স্থানীয় অনেক পত্রিকায় এখন ওর লেখা সম্পাদকরা স্বাচ্ছন্দে প্রকাশ করছে। মোট কথা সানজিদার জীবনের মোড় ঘুরে গেছে। সম্ভাবনাময়ী লেখিকা, গল্পকার ও ছড়াকার হয়ে উঠেছে আমার সাথে পাল্লা দিয়ে। সবই সম্ভব হয়েছে ওর স্বপ্ন, আনন্দ-আশা, চেষ্টা-সাধনা, ত্যাগ-মহিমা, আগ্রহ, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কারণে। বছরে ২-১ বার আসে আমাদের বাসায়। যতই সানজিদার গল্প করছি ততই মাসুদ আবেগী হয়ে ওকে দেখার জন্য উতালা হয়ে উঠছে।
আচমকা সানজিদার বান্ধবী মোরশেদাকে সাথে নিয়ে হাস্যজ্জল বদনে ঠিক আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। আমরা তো আনন্দে গদগদ। চোখে কাজল দিয়ে আসাতে আজ ওকে অপূর্ব লাগছে। ওমা একি! সানজিদার হাতে র‌্যাপিং পেপারে মোড়ানো উপঢৌকন! ভিতরে কি আছে দেখে কারো বোঝার কোন জো নেই। আমার জন্মদিনে সানজিদা সরাসরি উইশ করতে পারেনি। সারপ্রাইজ দেয়ার জন্যই আমাকে নিয়ে এসেছে- এই যা। একগাল হাসি দিয়ে উপঢৌকনটি আমার হাতে ধরিয়ে দেয়। অভিনব কায়দায় বলে উঠে ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ’! আমিও ওর উইশ-উপঢৌকন আন্তরিকতার সহিত গ্রহণ করে অতি উৎসাহ ভরে থলির মধ্যে তা চালান করে দেই। সানজিদার মার্জিত রুচি, তীক্ষœ বুদ্ধি, সংযত ভাষা, বিনীত ব্যবহার মোটকথা ওর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বে আমাদের মুগ্ধ করে। আমরা ওদের কলেজের পিছনের মাঠের একপাশে দাড়িয়ে নিরন্তর গল্প জুড়ে দিলাম। মাঠটির চারিদিকে সবুজ দুর্বার গালিচা। আশপাশ গাছগাছালিতে ভরা। আর ফাঁক দিয়ে আমাদের মাথায় সূর্যের আলো পড়ছিল। নিবিড় ছাড়াঘেরা পরিবেশ। মন ছুয়ে যায়।
অকস্মাৎ একপাশে চটপটিওয়ালাকে দৃষ্টিগোচর হওয়ায় সানজিদা চটপটি খাওয়ার লোভ একদম সংবরণ করতে পারলনা। ঝটিতি ৪ প্লেট পরিবেশন করার অর্ডার করল চটপটিওয়ালাকে। মাসুদ এসবের ধার ধারে নাই। আমাদের পিড়াপিড়িতে অনিচ্ছা সত্তেও কোনমতে একটি গিলে। মাসুদের অবস্থা বেগতিক দেখে সানজিদা বাঁকা ঠোঁটে হাসি দিয়ে উদারতার ভাব দেখিয়ে সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করে। ভারের মত ওর দুই প্লেট একাই পেটে জামিন দিতে দেখে হাসতে-হাসতে, কাশতে-কাশতে আমার দুচোখে অশ্রুধারা বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ফিরে নিজেকে কোনমতে সামলে নিলাম। ইতোমধ্যে সানজিদার আরো ২ বান্ধবী বিথী ও মারিয়া আমাদের আড্ডায় যোগ দিল। ওর বান্ধবীরা সমঝদার হওয়ায় হাস্যরসের মাত্রা আরো বেড়ে গেল।
হঠাৎ গল্পে ব্যাঘাত ঘটিয়ে আমার মোবাইলে রিং বেজে উঠল। কাকতালীয়ভাবে পরখ করলাম সানজিদার কলেজের ভিপি আনোয়ারের নাম্বার। আমার সাথে দেখা করতে আসছে জানায়। বলে রাখা ভাল, আনোয়ারের সাথে অনেক আগ থেকেই আমার কথা হত মাঝে মধ্যে। ছোট ভাই হিসেবে ওকে নাম ধরেই সম্বোধন করতাম। সবাইকে রেখে আনোয়ারকে রিসীভ করে নিয়ে আসি। ভিপি যে সানজিদাকে ডিস্টার্ব করে তা না জানার ভান করে আনোয়ারকে পরিচয় করিয়ে দেই- ও হচ্ছে আমার প্রিয় ব্যক্তি সানজিদা। আর ওরা হচ্ছে সানজিদার ক্লাশমেট ও বান্ধবী।
এদিকে সানজিদার ক্লাশের সময় ঘনিয়ে আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লাশ শুরু হয়ে যাবে। এতক্ষণ মৌজে থাকায় সময় যে কিভাবে চলে গেল আমরা কেউই টের পাইনি। পরিমরি করে আমাদেরকে বিদায় দিয়ে সানজিদা চলে গেল। মূর্তির মত দাড়িয়ে ওর যাওয়ার দৃশ্য করুণভাবে প্রত্যক্ষ করতে লাগলাম। এই মূহুর্তের জন্য আমি কখনই প্রস্তুত ছিলামনা। কিছু একটা বলতে চেষ্টা করলাম। পারলাম না। গলা জড়িয়ে গেল।

ঢেউ ও তার সমালোচন

বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের মুখপত্র ‘ঢেউ’ নিয়েই আমার যত পর্যালোচনা ও গঠনমূলক সমালোচনা। কারো তল্পীবাহক হয়ে নয়, নিছক বাতবরণ-বাগাড়ম্বর করাও নয়, কোনো পুরস্কারের লোভেও নয়, তিরস্কারে লাঞ্ছিত হয়েও নয়, কারো সম্মানহানির উৎসবে মেতে উঠতেও নয়, সংগঠনের ১০ বছরের প্রয়াসকে নিন্দা জানাতেও নয়, নিরেট বিবেকের তাড়নায় অর্থাৎ মানবিক গুণে ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিনের সম্পাদকের ভুল ভ্রান্তি শোধরানো ও সংবিৎ ফিরানোর অভিপ্রায়ে। কবির ভাষায় সময় তো দাড়িয়ে থাকে না- সে গড়িয়ে চলে মাড়িয়ে যায় এবং কালের আবর্তে হারিয়ে যায়। এই হারানোর ইতিহাস লেখার জন্য কেউ কাউকে নির্দেশ দেয়নি। সে আপনা থেকেই কলম তুলে নিয়ে লিখতে থাকে চলার কথা, বলার কথা, সুখ-দুঃখ, কান্না-হাসির কথা। তবে আমি আজ আমার প্রিয় বিক্রমপুরের সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কলামিস্ট, লেখক, সমাজ ও পরিবেশ কর্মী ভাই ও বোনদের কাছে সম্প্রতি হাতে পাওয়া ঢেউ তা নিয়েই আমার যত কথা, যত আলোচনা।
যে কোন কাজে উৎকর্ষ লাভের জন্য চাই তীক্ষ্ণ মনযোগ, কাজের গুরুত্ব অনুধাবন, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা, দূরদর্শিতা, নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা ও ধারাবাহিকতা। সাহিত্য ম্যাগাজিনকে অপূর্ব, অতূলনীয় ও মানসম্মত করার জন্য প্রাজ্ঞ ও বিদগ্ধদের সহযোগিতা, উৎসাহ, প্রেরণা ও উদ্বুদ্ধ করণ একান্ত কাম্য। তাছাড়া যে যে বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী সে কাজ সম্পর্কে তার বিশেষ বুৎপত্তি ও যথেষ্ট অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে সৃজনশীনাতার ক্ষেত্রে তার কোনমতেই নিজে নিজেই অভিজ্ঞ বনে যাওয়ার অবকাশ নেই। অন্যথায় সে বিষয়ে দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞদের অনুসরণ, অনুকরণ করে, পরার্শ নিয়ে ও তাদের সাথে মিশে সেই শূণ্যতা পূরণ করার অবারিত সুযোগ রয়েছে বলে মনে করি। নিয়মিত পাঠভ্যাস যে কোন সম্পাদক, সাহিত্যিক, কলামিস্ট, লেখক ও ভাবুকের অজ্ঞতা, ভুল-ভ্রান্তি ও ধারণার অস্পষ্টতাকে দূর করে। কোন কিছুকে আরও সুখপাঠ্য ও চমৎকার করার জন্য অবশ্যই একগুঁয়েমী, আলস্য, অধৈর্য, তারাহুরাভাব, লোভ, হীনমন্যতা, দাম্ভিকতা, ভয় ও গ্রন্থবিমুখতা ত্যাগ করতে হবে।
চির সত্য কথা হল কুরআন ছাড়া পৃথিবীতে নির্ভুল ও নিখুত বলে কিছু নেই। তবে কিছু কাজে দৃষ্টিগোচর হওয়ার মত কিছু ভুল না শোধরালেই নয়। বিষয়টির ব্যাখ্যা শুরু করতে চাই। শুরুটি ঠিক বুকের ভেতর দুরু দুরু শব্দে সঙ্গীতের ধ্বনির মতো বেজে উঠে।
ঢেউ এর আগস্ট সংখ্যাটি হাতে পেয়ে সযত্নে সোকেসে রেখে দেই। আত্মার দংশনে, বিবেকের তাড়নায় ও লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ার অভিলাষে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বিরতি নিয়ে কয়েকবারে পুরো সংখ্যাটিই ধৈর্যসহকারে পড়ে শেষ করি। ম্যাগাজিনটির সাথে গত দুই বছর ধরে পরিচিত; তাও সদরে গিয়ে নিজ উদ্যোগে খুঁজতে থাকি বিক্রমপুর থেকে কি কি পত্রিকা, সাহিত্য সাময়িকী ও ম্যাগাজিন বের হয় সেই সুবাদে। আমার ব্যক্তিগত সমীক্ষা, গবেষণা ও অনুসন্ধানে প্রায় ২০টি পত্রিকার নাম বেরিয়ে আসে, যার মধ্যে অনেকগুলিরই রেজিস্ট্রেশন নেই। তার মধ্যে রেজিস্ট্রিকৃত মাসিক বিক্রমপুর নিয়মিত বের হচ্ছে প্রতিষ্ঠাকালীন ১৯৮১ সাল থেকে আজ অবধি। তিনমাস ধরে এই পত্রিকাটি ৬টি উপজেলার সরকারী সব বিভাগ, কিছু চিহ্নিত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্যিক, সমাজ কর্মী, পরিবেশ কর্মী, ব্যবসায়ী, মাসিক বিক্রমপুরের গ্রাহক ও এজেন্টদের হাতে পৌঁছানো হয়। মুন্সিগঞ্জের কাগজও নিয়মিত বের হয়ে শুধু ৬ উপজেলার টিএনও ও থানার গন্ডি পর্যন্ত সিমাবদ্ধ। এছাড়া বিভিন্ন অকেশনে ব্যপকহারে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী ও বিজ্ঞাপনদাতাদের হাতে দৈনিকটির সংখ্যা চলে যায়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এদুটি ছাড়া মুন্সিগঞ্জ থেকে নিয়মিত কোন পত্রিকা, সাহিত্য সাময়িকী বা ম্যাগাজিন বের হয়ে সব উপজেলার দোরগোড়ায় পৌঁছে এমন তথ্য আমার কাছে অনুপস্থিত।
সংখ্যাটি পড়ে প্রথমেই আমার কাছে কয়েকটি ভুল চিহ্নিত হয়। মাসিক বিক্রমপুরের লেখক ও পাঠকদের সাথে তা ব্যক্ত ও শেয়ার না করার লোভ একদম সামলাতে পারছিনা। আর তা হল- ১.ভাল মানের স্থানীয় লেখক (সৈয়দ টিপু সুলতান, নূহ-এ-আলম লেনিন, এমদাদুল হক মিলন প্রমুখ), সাহিত্যিক ও সাংবাদিকের লেখা অনুপস্থিত, ২.ভালভাবে যাচাই-বাছাই ও সম্পাদনা না করেই সংখ্যাটি বের করা হয়েছে, ৩.অন্য জায়গায় প্রকাশিত লেখা এখানে হেডিং পরিবর্তন করে ছাপানোর নজির রয়েছে ও ৪.বানানের ক্ষেত্রে কিছু প্রিন্টিং ও এডিটিং ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে। চলতি সংখ্যাটির মান কমানোর পিছনে সবগুলি কারণেরই কমবেশি অবদান রয়েছে।

একজন সম্পাদকের জন্য খুবই লজ্জার বিষয় হচ্ছে অন্য পত্রিকার লেখা নিজেরটিতে প্রকাশ করা। একজন স্থানীয় সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে নিজ উদ্যোগে স্থানীয় সব পত্রিকার খোজ-খবর নিজ স্বার্থে রাখা উচিত বলে আমি মনে করি। পাঠকের দৃষ্টিতে এখানে তার অনভিজ্ঞতা, অদক্ষ্যতা, অযোগ্যতা, অপরিণামদর্শিতা ও অজ্ঞতাই স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়তই যদি এমন হতে থাকে তাহলে তার উদ্দেশ্য পুরোপুরি উবে যাবে। অভিজ্ঞতা অর্জনের অন্যতম উপায় হচ্ছে ভুল (নিজের ভুল অথবা অন্যের ভুল) থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। আমরা জানি ছোট ছোট ভুল থেকে একটি সময় বড় কোন ভুল বা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। আর ব্যর্থতা হল সফলতার যাত্রাপথে একটু বিরতি মাত্র। অনেকে বলেন ব্যর্থতাই সফলতার ভিত্তি। তবে স্বপ্নচারীদের থেমে গেলে চলবেনা। ধৈর্যসহকারে এই সমস্ত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে সফল হওয়াই একজন দক্ষ সম্পাদকের কাজ।
সাহিত্য সাময়িকী ঢেউ এর বর্তমান আগস্ট-১৩ সংখ্যায় লেখকের দৃষ্টিতে মাত্র তিনটি লেখা চমৎকার হয়েছে যা অস্বিকার করার জোঁ নেই। যথা- ১.সালাম আজাদের ভাঙ্গামঠ ও গুরু-শিষ্য সংবাদ, ২.শ্রীনগরের লালা বংশ ও ৩.একটি নষ্ট রাতের কষ্ট । ৬২ পৃষ্ঠার ম্যাগাজিনের ভিতর ৪৮ জন নবীন ও প্রবীণ লেখকের ৫৫ টি লেখা স্থান পেয়েছে। এ সংখ্যায় ২ জন লেখককে ১৮ পৃষ্ঠা না দিয়ে, ৯ জন লেখককে ২ পৃষ্ঠা করে ৯ টি বাছাইকৃত লেখা দেয়া হলে ম্যাগাজিনটির মান আরও সহজবোধ্য, প্রাঞ্জল, রুচিশীল, মার্জিত ও উন্নত হত। ম্যাগাজিনটির স্বকীয়তা বজায় রেখে সম্পাদকের সদিচ্ছায় ভাল লেখে এমন আরো লেখকের লেখা সন্নিবেশিত করা যেত। লেখার সাথে যুৎসই চিত্র বিদ্যমান থাকলে পাঠক সেটি না পড়ে এরিয়ে যাওয়ার দু:সাহাস করত না। সমালোচকের ধারণা মতে সম্পাদকের হীনমণ্যতা না থাকলে পত্রিকাটির গ্রহণযোগ্যতা আরো বৃদ্ধি করা যেত। যেহেতু বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের পক্ষ থেকে বের হচ্ছে তাই ম্যাগাজিনটি কলেবর বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে এই পাঠকের পক্ষ থেকে পরামর্শ হল এখানে স্থান পাওয়া প্রবন্ধ, কবিতা, আলোচনা, ছোট গল্প, ইতিহাস ও উপন্যাসের সাথে যুগের চাহিদার প্রেক্ষিতে নাটক, সায়েন্স ফিকশন, রম্য রচনা, কৌতুক, ধাঁধাঁ, ছোটদের আঁকিঝুকি, প্রতিবেদন, তথ্যচিত্র, নিবন্ধ, কলাম, বিক্রমপুরের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও ঐতিহ্য (যেমন- খোদাই সিন্নি, পিনিস, পালকি, ঢেকি, গস্তি নৌকা, পোড়াগঙ্গা, রজত রেখা, কাজল রেখা ইত্যাদি) সংরক্ষণের জন্য নিয়মিত ঢেউ এ তুলে ধরা উচিত।
ঢেউ এর সম্পাদক ও মাসিক বিক্রমপুরের পাঠকবৃন্দ আমাকে ভুল বুঝে থাকলে ক্ষমা করবেন। আমি চাই মুন্সিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত প্রত্যেকটি সাহিত্য সাময়িকী, ম্যাগাজিন ও পত্রিকা নির্ভুল, নিখুত, মার্জিত, মানসম্পন্ন ও সর্বজন গ্রহণীয় হয়ে উঠুক।
২০০৩ সাল থেকে আমি বন্ধুদের খ্যাপানোর জন্য ব্যঙ্গাত্মক কিছু সাহিত্যিক কর্ম খেলাচ্ছলে শুরু করি। সেই থেকে আমার বন্ধুদের মধ্যে অনেকে আজও কবি/সাহিত্যিক বলে সম্বোধন করে। তৎকালে আমার লেখা দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, মাসিক আলোর দ্বীপ, মাসিক আদর্শ নারী, মাসিক কিশোর কন্ঠ ইত্যাদিতে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে আমি দৈনিক সংবাদে একজন প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছি। এছাড়া একটি অনলাইন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করছি মাত্র। বিক্রপুরের ঐতিহ্যবাহী মাসিক বিক্রমপুরে কাজ করে অনেক কিছু নতুন করে শিখতে হয়েছে, যেটা আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে।
বেগার পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ ও পরামর্শ দেখে অনেকেই দাঁত কেলিয়ে হি হি করে হাসবে তবুও সেসবে পাত্তা দেয়ার মত মানসিকতা মাসিক বিক্রমপুরের ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের একদম নেই। তবে এই লেখা যদি ঢেউ নতুন পথে এগিয়ে নতুন নতুন সংখ্যা এখন থেকে বের হয়ে নিয়মিত সর্বস্তরের পাঠকের হাতে পৌঁছে তাহলে এর মাঝেই আমার স্বার্থকতা খুঁজে পাব।

-ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, মাসিক বিক্রমপুর (০১-১০-২০১৩ইং) ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত

Dream বা স্বপ্ন

আমি স্বপ্ন দেখতে ভীষণ পছন্দ করি। আর আমার সাথে কেউ তার স্বপ্ন শেয়ার করলে পুলকিত হই। স্বপ্ন দেখতে পারে আমাদের মাঝে এমন লোক কমই আছে, আর স্বপ্ন দেখাতে পারে তার সংখ্যা আরও কম। স্বপ্ন দেখা আমাদের জন্মগত অধিকার, ভাগ্যের ব্যাপার নয়। স্বপ্ন এমনভাবে দেখতে হবে যাতে আমাদের ঘুম কেড়ে নেয়। স্বপ্ন দেখলেই চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমরা স্বপ্ন কাউকে চুরি করতে দিব না বা কোন ভাবেই চুরি হতে দিবনা।

যারা স্বপ্ন চোর:-
পরিবার (স্ত্রী, মা-বাবা, ভাই-বোন)
বন্ধু-বান্ধব
কাজিন
পাড়া-প্রতিবেশী
রুমমেট-ক্লাশমেট
কলিগ

যেভাবে স্বপ্ন চুরি হয়:-
যখনই আমরা কোন চিন্তা করি বা স্বপ্ন দেখি তখনই তারা বলতে শুরু করে পাগল হইয়া গেছে। এই সমস্ত পাগলামি বাদ দাও। অবিশ্বাস্য ব্যাপার। অসম্ভব এটি তোমার দ্বারা হবে না। জীবনে কি কম দেখেছি নাকি তুমি এটা পারবে। অনেকে হাসতে থাকে, টিজ করে আর বলে অভিজ্ঞতায় আমার চুল পেকে গেছে, কত দেখলাম তোমার মত। বলে রাখা ভাল, তার মত পাকা চুল ভেড়ার গায়েও আছে তাহলে কি ভেড়া অভিজ্ঞ নয়! স্বপ্ন দেখাটা পাগলামী নয়, না দেখাটাই পাগলামী। যারা স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে তারাই পাগল।

স্বপ্ন না দেখার পরিণতি:-
কোন জাতি বা দেখের উন্নতি ঘটে না।
হতাশা ও বিপর্যয়/দুর্দশা নেমে আসে।
কর্মপ্রেরণা হারিয়ে ফেলে মানুষ।
মানুষ দরিদ্র হয়ে যায়।
কোন কাজেই সফলতা আসে না।

স্বপ্ন দেখার ফল:-
এন পবিত্র থাকে।
বেচে থাকার একটি কারণ তৈরি হয়।
কাজে নামার উপায় তৈরি হয়।
কাজে ক্লান্তি আসে না অর্থাৎ দীর্ঘদিন কাজ করার অনুপ্রেরণা আসে।
আমাদের ভিশন ক্লিয়ার হয়।
সফলতার ক্ষেত্রে বাধাগুলি দূর হয়।
এনটি-বডি তৈরি হয়।
সফলতা আসে আত্মবিশ্বাস থেকে, আত্মবিশ্বাস আসে অভিজ্ঞতা থেকে, অভিজ্ঞতা আসে অধ্যাবসায় থেকে, অধ্যাবসায় আসে লক্ষ্য থেকে আর লক্ষ্য আসে স্বপ্ন থেকে। বুঝা গেল স্বপ্নই সফলতার কুড়েঘর।

বপ্ন বড় করার জন্য যা করা দরকার:-
ইমাজিনেশন করতে হবে।
মেডিটেশন করতে হবে।
মটিভেশনাল বই পড়তে হবে।
মটিভেশনাল ভিসিডি দেখতে হবে।
অভিজ্ঞ, জ্ঞানী এবং উচু ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের সাথে মিশতে হবে।
যারা বড় বড় স্বপ্ন দেখে তাদের সাথে মিশতে হবে।
যারা গোছালো, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আছে, পজিটিভ, ক্রিয়েটিভ, ও প্রো-একটিভ তাদের সাথে মিশতে হবে।
বড় ও প্রশস্ত রাস্তায় যেতে হবে।
সমুদ্রে যেতে হবে।
পাহার পর্বতে যেতে হবে।
বড় সমাবেশ, মিছিল, মেরাথন ট্রেনিং ও বড় হাট-বাজারে যেতে হবে।
সেলিব্রেশন প্রোগ্রামে যেতে হবে।
ইনটারনেট সার্স করতে হবে।

Dream বা স্বপ্ন কি?
Dreams are not a matter of chance but a matter of choice- David Copperfield
D=Determination
R=Responsibility
E=Enthusiasm
A=Attainable
M=Measurable

স্বপ্নের প্রকারভেদ:-
স্বপ্ন ২ প্রকার। যথা-
ব্যক্তিগত স্বপ্ন
পেশাগত স্বপ্ন

ব্যক্তিগত স্বপ্ন:-
ঋণ পরিশোধ।
পরিবারের সাথে বেশি সময় দেয়া।
ব্যক্তি স্বাধীনতা।
সময়ের স্বাধিনতা।
আর্থিক স্বাধিনতা।
দেশ-বিদেশে ভ্রমণ।
মৃত্যুর পূর্বে এক লক্ষ বন্ধু তৈরি করা।
ব্যক্তিত্বের বিকাশ।
নেতৃত্ব, প্রভাব অর্থাৎ ক্ষমতা।
সম্মান।
অপরকে সহযোগিতা।
গাড়ি, বাড়ি ও নারী।
সুখ-শান্তি।
ট্রেইনার, মটিভেটর ও নেটওয়ার্কার হওয়া।

পেশাগত স্বপ্ন:-
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও লয়ার হওয়া।
সাংবাদিক ও সাহিত্যিক হওয়া।
পুলিশ, র‌্যাব, বিডিয়ার, আর্মি ও গোয়েন্দা অফিসার হওয়া।
শিক্ষক ও প্রফেসর হওয়া।

স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার পদ্ধতি:-
আত্মবিশ্বাসের সহিত নিজের স্বপ্ন নিয়ে কথা বলা।
স্বপ্ন লিখে রাখতে হবে (ডাইরিতে, দেয়ালে, আয়নার সামনে, পড়ার টেবিলে ও বেডরুমে)।
লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঠিক করতে হবে।
ত্যাগী হতে হবে (অজুহাত, আলস্য, রাগ, ইগু, হীনমন্যতা, গল্প-গুজব, খেলা-ধুলা, মুভি দেখা ও বেশি ঘুম পরিত্যাগ করা)।
প্রতিশ্রুতি, কাজ ও অর্জন করতে হবে।
বিলাসবহুল গাড়ি, মনোরম বাড়ি দেখার পর বলতে হবে ক’দিন পর এরকম আমারও থাকবে।
ভাল লাগার বিষয় ও কেন সফল হব তাও আমাদের লিখে রাখতে হবে।
আমাদের ইচ্ছাগুলি নিয়ন্ত্রণ ও সময় অপচয় রোধ করতে হবে।
গর্বপরি আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য, জীবন গড়ার জন্য, সফলতা অর্জনের জন্য একটি অঙ্গিকার থাকতেই হবে। যে জীবনের প্রতি, নিজের কাজের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, তাকে আমরা বলি প্রতিশ্রুতিশীল। একজন প্রতিশ্রুতিশীল যুবকই পারে সাফল্যের স্বপ্ন দেখতে। কোনও কাজ নিষ্পত্তি করার দৃঢ় অঙ্গীকার নির্মাণ করতে হয় দু’টি স্তম্ভের উপর। সে দুটি হলো সততা ও বিজ্ঞতা। যদি আমাদের ক্ষতিও হয় তবু অঙ্গীকারে দৃঢ় থাকার নামই সততা। আর বিজ্ঞতা হচ্ছে, যেখানে ক্ষতি হবে সেই রকম বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ না হওয়া।
কোথায় ছিলাম বা কোথায় আছি সেটা বড় কথা নয়- কোথায় যেতে চাই সেটাই মূখ্য বিষয়।
তাহলে দেখব, আমরা সত্যি সত্যিই কিছু একটা কওে ফেলেছি। কি করেছি তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কি হয়েছি! একজন সফলকাম লোকই স্বপ্ন ও লক্ষ্য নিধারণ করে।

মরহুম মাওলানা আব্দুল খালেক (র.)

মরহুম মাওলানা আবদুল খালেক

মরহুম মাওলানা আবদুল খালেক

এক অনন্য চরিত্রের অধিকারী মহামনীষী, যার অসাধারণ চারিত্রীক গুণাবলী সকলকেই সমভাবে কাছে টানতো, সকলে একই রকম ভালবাসা অনুভব করত তার কাছ থেকে। তার সেই চারিত্রীক চুম্বকীয় আবেশে ধর্ম-বর্ণ, উচু-নীচু, ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, জ্ঞানী-অজ্ঞানী সকলকেই অকৃত্রিমভাবে আবেশিত করে তুলত। মানুষের কাছে তার চরিত্রের এই দিকটিই সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের, যেই তার সংস্পর্শে এসেছে সেই ভাবত পৃথিবীতে তাঁর সাথেই হয়ত মাওলানা সাহেবের সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা, তিনি তাকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন। তাই মৃত্যুর এত বছর পর এসেও মানুষেরা তাঁর সেই ভালবাসা অনুভব করে একইভাবে, আর সেই ভালবাসার মানুষের অনুপস্থিতি তাদের মর্মে আঘাত হেনে অশ্রু নদীর বাঁধ ভেঙ্গে দেয়, স্রোতধারার মতো দুগন্ড বেয়ে ঝড়ে পরে বুক ফাটা বোবা কান্নার নোনা জল। আজও তাঁর গুণগ্রাহীরা যেকোনো সমস্যায় আক্রান্ত হলে তার সুষ্ঠ সমাধানের দিনগুলির কথা স্বরণ করে দুঃখের মাতম করে। তাঁর স্মরণে এই সমস্ত হাজার হাজার ভক্ত অণুরাগীরা প্রতি বছর তার ইছালে ছওয়াব মাহফিলে জমায়েত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরে। তাঁর এলাকা বাসী প্রতি বছর তার স্মরণে ইছালে ছওয়াব মাহফিল করে থাকে। এই মহা মনীষীর নাম মাওলানা মোহাম্মদ আবদুলল খালেক (র.)। তিনি ২২ পৌষ ১৩৪৭ বাংলা সাল মোতাবেক ৫ জানুয়ারী ১৯৪১ ইংরেজী সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানার অন্তর্গত লতব্দী ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামে ঐতিজ্যবাহী সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল হাই বেপারী, মাতার নাম তছিরুন নেছা। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিঁনি দ্বিতীয়। তাঁর পূর্ব পুরুষরা এই এলাকার আদি বাসিন্দা, তাঁর বংশ ইতিহাস থেকে জানা যায় মাওলানা সাহেবের দাদার নাম রৌশন আলী বেপারী, তার পিতার নাম মোহাম্মদ হানিফ বেপারী, তার পিতা মদন মুন্সি, তার পিতা মোহাম্মদ মানু বেপারী, তার পিতা পাচু বেপারী। পূর্ব পুরুষদের মধ্য থেকে মদন মুন্সি একই উপজেলার তাজপুর গ্রাম থেকে সর্ব প্রথম এই এলাকায় এসে নিবাস গড়েন, সেই থেকে আজো তারা বংশ পরম্পরায় এখানেই আছেন। এই মহা মনীষী পারিবারিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন, তারপর মধ্যপাড়া ইউনিয়নের পুরাতন মোস্তফাগঞ্জ মাদ্রাসায় কিছু কাল অধ্যায়ন করেন। সেখান থেকে পরবর্তীতে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার সোনাহাজরা মাদরাসায় অধ্যায়ন শুরু করেন, এবং এই মাদরাসা থেকেই ১৯৫৯ সালে দাখিল ও ১৯৬৩ সালে কৃতিত্বের সাথে আলিম পাস করেন। তারপর বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা থেকে ১৯৬৫ সালে ফাজিল পরীক্ষায় বোর্ড স্ট্যান্ডে উত্তীর্ণ হন, একই মাদরাসা থেকে ১৯৬৭ সালে কামিল পরীক্ষায় তিন নাম্বর বোর্ড স্ট্যান্ড করেন। এতবড় জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার পরও সব সময় নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন। ছাত্র অবস্থাতেই তার জ্ঞানের কথা ছাত্র শিক্ষকদের গন্ডি পেরিয়ে অনেকদূর ছড়িয়ে পরে, আর তাই তাঁর কামিল পরীক্ষার রেজাল্টের পর ইরানী দূতাবাসের মাধ্যমে তৎকালীন ইরান সরকার তার দেশের এক বিদ্যাপিঠে শিক্ষকতা করার জন্য আহ্বান করেন, তিঁনি তার সেই প্রস্তাবনার কথা মাকে জানালে তাঁর মা বলেছিল তোকে এত বড় আলেম বানালাম এলাকায় থাকবি এলাকায় থেকে এলাকার মানুষদের ভালমন্দ দেখবি বলে, বিদেশ চলে গেলে এদের দেখবে কে? তিনি মায়ের কথা রক্ষা করার জন্য এলাবাসীর ভালবাসার টানে এত বড় লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে পাশবর্তী টঙ্গিবাড়ী থানার বেতকা গ্রামে এক অখ্যাত মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন। এই মাদরাসায় চাকুরীর সময় একই থানার নিতিরা গ্রামের পীর মরহুম মৌলভী আব্দুল মজিদ খন্দকারের ছোট মেয়ে হাসিনা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেই মাদরাসায় বেশ কয়েক বছর চাকুরী করার পর মায়ের আরো পাশাপাশি থাকার জন্য পাশবর্তী গ্রাম নিমতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চলে আসেন। এখানে দুই বছর চাকুরী করার পর মায়ের অনুমতি নিয়ে শ্রীনগর থানার গাদিঘাট মাদরাসার সুপার/প্রধান হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। সেখানেও তার বেশি দিন থাকা হয়নী মায়ের দাবি রক্ষার্থে, তিঁনি তার মা এবং এলাকার মানুষদেরকে এত বেশি ভালবাসতেন যে শেষ পর্যন্ত সেই ভালবাসার টানে মাদরাসা সুপারের চাকুরী ছেড়ে পূণরায় সেই নিমতলা প্রাইমারী স্কুলে চলে আসেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানেই চাকুরীতে নিয়জিত থাকেন সেই সহকারী শিক্ষক হিসেবেই। মাঝে বহুবার বহু শিক্ষা অফিসার তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রমোশন দিতে গেলে তিনি প্রতিবারই তাদের সেই কথাকে ফিরিয়ে দেন বিনয়ের সাথে। প্রধান শিক্ষকদেরকে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক সময় অনেক বিষয়কে বাড়িয়ে কমিয়ে উপ¯’াপন করতে হয় এই বিষটি তাকে প্রধান পদের প্রতি নিরুৎসাহিত করে। তিনি সত্যের সাথে কোনো কিছুর বিনিময়েই আপোষ করেননি কখনো, প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে থাকলেও তার শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাননি, আমলের এতটুকুও ঘাটতি পরেনি কখনো, বাড়িতে বসেই চালিয়ে গেছেন আধ্যাতিক জ্ঞান চর্চা। প্রাইমারী স্কুলে চাকুরী করলেও তার জ্ঞান চর্চায় কোনো ভাটা পরেনি, এখানে চাকুরী করার সময় তিঁনি ইসলামী শরীয়তের বিভিন্ন বিষয়ের সঠিক মাসয়ালার ফতওয়া দিতেন। তার দেয়া ফতওয়া খন্ডন করার দূঃসাহস সমসাময়ীক কোনো আলেমেরই ছিলনা। এই ধরনের ফতওয়া দিয়ে অনেক বার অনেক বড় বড় আলেমের সাথে তার বাহাস হয়েছিল আর প্রতিবারই বাহাসে তিঁনি বিজয়ী হয়েছেন। এমন এক বাহাসের কথা মানুষ এখনো ভুলতে পারেনি, সেই সময় শরীয়তের জটিল বিষয়ের যেকোনো সমাধান তিনি করলে সমস্ত আলেমগণ তা নির্দিধায় মেনে নিতেন যারা তার পান্ডিত্যের কথা জানত। তৎকালীন সময়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার প্রধান মাদরাসা ইসলামপুর কামিল মাদরাসায় এক ভাইস প্রিন্সিপাল এসেছিলেন, তিনিও খুব বড় মাপের আলেম ছিলেন। একাধারে বেশ কয়েকটি ভাষায় জ্ঞান রাখতেন। তিঁনি মাওলানা সাহেবের জ্ঞানের পরিধি সম্বন্ধে তেমন একটা ওয়াকিব হাল ছিলেননা। তখন এক জটিল মাসয়ালা সম্বন্ধে মাওলানা সাহেব ফতওয়া দেন। যে ব্যক্তির বিষয় নিয়ে ফতওয়াটি দেয়া হয়েছিল ফতওয়াটি তার প্রতিকূলে গেলে তিঁনি সেটির জন্য আরো সহনশীল সমাধান চেয়ে সেই ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে গেলে তিঁনি তার মাসয়ালায় আরেকটু সহনশীল ফতওয়া প্রদান করলে তা নিয়ে এলাকায় বিশালভাবে বিতর্ক তৈরী হয়। এই বিতর্কের অবসান ঘটানোর জন্য শেষ পর্যন্ত বাহাসের আয়োজন করা হয়। বাহাসটি নিয়ে সর্বস্তরে কৌতূহলের অন্ত ছিলনা। একেতো মাওলানা সাহেব, অপরদিকে এক মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল, তাই বাহাসে সাধারণ জনগণের পাশা-পাশি অনেক বড়-বড় আলেমগণ উপ¯ি’ত ছিলেন। নির্ধারিত সময়ে বাহাস শুরু হলে কোন ভাষায় বাহাস হবে সেই নিয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল সাহেব প্রশ্ন তোললে মাওলানা সাহেব তাকে বিনয়ের সাথে বলেন বাংলা, উর্দু, ফার্সী, আরবী যেকোনো ভাষায় আপনার পছন্দ সেই ভাষাতেই হোক। শেষ পর্যন্ত বাহছ হয়েছিল উর্দু ভাষায়, বাহাস অনুষ্ঠানে ভাইস প্রিন্সিপাল সাহেব সেই ফতওয়া সমন্ধীয় অনেক কিতাব সাথে নিয়ে এসেছেন, আর মাওলানা সাহেব এসেছেন খালি হাতে। অনেক সময় ধরে বাহাস চলে, বাহাস চলাকালীন সময়ে তার শরীয়তি জ্ঞানের পান্ডিত্য দেখে উপ¯ি’ত আলেমগণ মুগ্ধ হয়ে পরেন। শেষ পর্যন্ত সেই বাহাসেও মাওলানা সাহেব বিজয়ী হয়েছেন আর বাহাসে হেরে ভাইস প্রিন্সিপাল সাহেব পূণরায় মাদরাসায় ঢুকেননী, সেখান থেকেই চলে যান চাকুরী ছেড়ে। তাঁর অসাধারণ জ্ঞানের কারণে তিঁনি ছিলেন এলাকার সমস্ত আলেমদের চোখের মনি, শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি আলেমদের মাঝে কোনো ভেদাভেদ করেননি, কমওমীয়া-আলিয়া বলে তার কাছে কোনো ব্যবধান ছিলনা। আশেপাশে বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, অনেক মাদরাসার কার্যকরী পরিষদের সভাপতি ও সেক্রেটারী ছিলেন। এই মহামনীষী জ্ঞানের দিক দিয়ে যেমন ছিলেন আধ্যাত্মিক দিকে ছিলেন আরো বেশি এগিয়ে। মানুষের সাভাবিক জীবনের বিভিন্ন জটিল বিষয়ের আধ্যাত্মিক সমাধান দিয়ে মানুষের সাথে একাকার হয়ে আছেন। প্রতিদিন সকাল বেলা তাঁর বাড়িতে লোকের ভীর লেগেই থাকত, মানুষের কত ধরনের সমস্যা এই সমস্ত লোকের ভীর থেকেই জানা যেত, কারো জ্বর, মাথা ব্যথা, আমাশয়, চোখে কম দেখে, চোখ উঠছে (উদাইছে), ভয় পায়, বিছানায় প্র¯্রাব করে, ছোট বা”চা কান্না করে, সাপে কাটছে, কোথাও কেটে গেছে, জ্বীনে আছর করছে, সন্তান হয়না, বিবাহ হয়না, স্বামী-স্ত্রীর মনো মালিন্য, সন্তান কথা শোনেনা, জন্ম বোবা, বুকের কড় বাড়ছে, হাপানি, বান মারছে, চুরি হইছে, গরুতে দুধ দেয়না, গরুতে লাথি মারে, ফসল নষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে, ফলন কম হচ্ছে, কারো মুখ লাগছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলি ছাড়া পুরুষ ও মহিলাদের আরো নানাবিধ যত ধরনের জটিল সমস্যা আছে সে সবের আধ্যাত্মিক সমাধান দিতেন। এর জন্য তিঁনি কখনো বিরক্তি বোধ করতেননা এবং কোনো ধরনের টাকা পয়সা নিতেননা। তার আধ্যাত্মিক শক্তি এতই প্রখর ছিল যে সেগুলি অনেকের কাছে অলৌকিক বলেই মনে হতো। তাঁর এই ধরনের আধ্যাত্মিক বিষয়ের অনেক বাস্তব ঘটনা মানুষের মুখে মুখে এখনো প্রচলিত রয়েছে। মাওলানা সাহেব এক বার বাড়িতে ব্যবহারের জন্য মুলি বাঁশ আনতে গেছেন সেখানে মুলির কাজ করার সময় মুলির ধারালো প্রান্তের সাথে লেগে এক লোকের নাকের হাড় সহ কেটে গেলে আর রক্ত থামানো যাচ্ছিছলনা। এক ব্যক্তি খুব শক্ত করে ধরে রক্ত থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল তবু রক্ত বেরুচ্ছিল; এসব দেখে মাওলানা সাহেব সামনে গিয়ে বললেন দেখি কি হয়েছে, তিঁনি লোকটিকে হাত সরিয়ে নিতে বললেন। লোকটি হাত সরিয়ে নিলে তিনি সেখানে তাঁর মুখের লালা দিয়ে নাকের বাশিটি সহ চামড়াটি লাগিয়ে দিলেন সাথে সাথে রক্ত থেমে গেল ও কাটা জায়গা জোড়া লেগে গেল। এই ঘটনা দেখে উপস্থিত সবাই তাজ্জব হয়ে গেল। একবার শুষ্ক মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে জমি শুকিয়ে ফেটে চৌচির, ফসলাদি সব নষ্ঠ হয়ে যাচ্ছিল, তখন সেঁচের এত উপকরণ ছিলনা। সেঁচের বহুল প্রচলিত মাধ্যম ছিল দোন (আলকাতরার টিটের কৌটার এক প্রান্ত কেটে রশি বেঁধে তৈরী করা সেঁচের জন্য) সেটি দিয়ে এই মাটি ভেঁজানো সম্ভব ছিলনা। এলাকার লোকজন মাওলানা সাহেবের কাছে গেলে তিনি সকলকে মাঠে জড়ো করে দ্ইু রাকাত নামাজ পড়ে, নামাজ শেষে দাঁড়িয়ে দুহাত আকাশের দিকে তুলে দুয়া করলেন; দোয়া শেষে বৃষ্টি ঝরায় মাঠের কেউ সেই বৃষ্টিতে ভেঁজা ছাড়া বাড়ি পৌঁছতে পারেনি। তাঁর মাধ্যমে এই ধরনের ব্যাপার অনেক জায়গায় অনেক বারই ঘটছে। বাজারের দোকানদারা হিন্দু হোক মুসলিম হোক যারা ব্যাপারটি লক্ষ্য করছে তারা মাওলানা সাহেব তার দোকানে আসলেই খুশি হয়ে যেতেন, কারণ ছিল তিঁনি দোকান থেকে কোনো মাল কিনলে সেদিন তার কেনার পর থেকে দোকানের বিক্রি বেড়ে যেত। এমন অনেক বাস্তবতা আছে যা মানুষ ভুলতে পারেনি, লোক থেকে লোক হয়ে ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। বাজারের এক ফলের ব্যবসায়ী পাঁকা আম নিয়ে অনেক বিড়ম্বনার মাঝে ছিল, আগের দিন যেভাবে সেল হওয়ার কথা ছিল সেভাবে সেল না হওয়াতে মজুদকৃত আমের অধিকাংশই রয়ে গেছে, যেগুলি বিক্রী হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ। আর সেদিন বিক্রী না হলে পুরোটাই লোকসান, বিক্রেতা ভেবে অস্থির এবার নির্ঘাৎ মাথায় হাত। কিন্তু সকাল ভোরে এসে মাওলানা সাহেব তার প্রথম ক্রেতা হিসেবে পাঁচ কেজি আম কিনেছে, তিনি আম নিয়ে চলে যাবার পর অল্প সময়ের মধ্যেই তার সব আম বিক্রি হয়ে গেছে; যেখানে আগে লোকসান গুণার কথা ছিল সেখানে সাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ব্যবসা হইছে। তার জীবনের এই ধরণের অনেক বাস্তবতা মানুষের মনে গেঁথে আছে যা তারা ভুলতে পারেনা এখনো সেই ধরনের পরিস্থিতি সামনে আসলে তার সেই কথাগুলি স্মরণ করে। তাঁর কাছে জাতি-ধর্ম কোনো ভেদাভেদ ছিলনা। তিঁনি মানুষ হিসেবে সকলকে সমানভাবে ভালবাসতেন, সেই ভালবাসা ভক্ত হৃদয়েও প্রবলভাবে দোলা দিত। মৃত্যুর পর তাকে শেষ বারের মতো দেখতে জনতার ঢেউ বয়ে গেছে চারি পাশে, এই জনতার মিছিলে সকল জাতের লোকেরই সমাগম ছিল যা মহা আশ্চর্যের। মৃত্যুর দিন আকাশ ছিল মেঘা”ছন্ন, কফিনের উপর সারক্ষণ মেঘের ছায়া পড়েছিল, কফিন কবরে রাখা পর্যন্ত সেই ছায়াটি তার সাথে সাথেই ছিল। আকাশের মাঝে পাখিদের করুন আহাজারি সকলের হৃদয় নাড়িয়ে দিছে, আকাশ জুড়েছিল পাখিদের ভীড় কত রকম পাখি তার ইয়াত্তা নেই। তার মৃত্যুর বহু আগেই এলাকা থেকে শকুন উধাও হয়ে গিয়েছে। অথচ মৃত্যুর দিন অসংখ্য শকুন চিলেরা সারা আকাশ জুড়ে উড়ে বেড়িছে আর তাদের ভাষায় নানাবিধ শব্দ করে শোকের মাতম করে গেছে সে দৃশ্য এখনো উপস্থিত জনতার চোখে ভাসে। এই মহামনীষী ৩ ফাল্গুন ১৪০৭ বাংলা সাল মোতাবেক ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০০১ ইংরেজী সালে রাত ০১ টায় সংসারে ছয় ছেলে ও তিন মেয়েকে রেখে ইহলোক ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি স্পষ্টভাবে সুরায়ে ইয়াছি পাঠ করেন, তার পর কালিমা পরতে পরতে এ জগৎ ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যান না ফেরার দেশে।

আইএফসি বাংলাদেশ নদী ও পরিবেশ কমিটি ঢাবি শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন

ইকবাল হোছাইন ইকুঃ
অনাড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে টিএসটির ক্যাফেটেরিয়ায় আইএফসি বাংলাদেশ নদী ও পরিবেশ কমিটি ঢাবি শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়। নবগঠিত এ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সথাক্রমে ঢাবির ‘বিক্রমপুর’ বাস কমিটির সভাপতি, মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ক্যাম্পাসে ভেজাল বিরোধী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ মুরাদ হোছাইন ও মোঃ জাহিদুল ইসলাম। অন্যান্য কর্মকর্তারা হচ্ছেন যথাক্রমে সিনিয়র সহ সভাপতি মোল্লা সিহাব উদ্দিন, সহ সভাপতি মামুনুর রশিদ, ইয়াসিন আরাফাত ও ফারহানা সুলতানা (সনি), সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহিদুল ইসলাম, সিনিয়র সহ সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহমুদুল ইসলাম, সহ সাধারণ সম্পাদক কানিজ ফাতেমা হীরা ও নয়ন ঢালী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আরিফুল্লা খাঁন, সিনিয়র সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদুল ইসলাম, সহ সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুহিব্বুল্লাহ, অর্থ সম্পাদক নাঈম আল আহাদ, সিনিয়র সহ অর্থ সম্পাদক মোঃ মিঠু, সহ সম্পাদক অমিত, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম সুমন, সিনিয়র সহ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, সহ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ ইব্রাহীম, মোঃ রাশেদুল ইসলাম, মোঃ আল আমিন, মোঃ নুরুল ইসলাম, মোঃ নাজমুল হোসাইন সোহরাব, এস এম মুজাহিদ, শামীম মোরল, সোহেল ও আইয়ুব, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আকিব বিন আনোয়ার, সিনিয়র সহ বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক গালিব, সহ বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রাফিয়া সুলতানা, নদী বিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সিনিয়র সহ নদী বিষয়ক সম্পাদক শরীফ আলম, সহ নদী বিষয়ক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, তছলীম হোসাইন, ও শেখ রাসেল, পানি বিষয়ক সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান খালিদ, সিনিয়র সহ পানি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ জসিম, সহ পানি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আসিফ খান, আর্সেনিক বিষয়ক সম্পাদক মোঃ খলিলুর রহমান, সিনিয়র সহ আর্সেনিক বিষয়ক সম্পাদক মোঃ তাজুল ইসলাম বিপ্লব, সহ আর্সেনিক বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আশরাফুল, শিক্ষা ও সাংস্কৃতি সম্পাদক তানভীর আহমেদ, সিনিয়র সহ শিক্ষা ও সাংস্কৃতি সম্পাদক মোঃ আক্তার হোসাইন, সহ শিক্ষা ও সাংস্কৃতি সম্পাদক সেলিম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোঃ ইকরাম হোসাইন মনি ও মোঃ মহিউদ্দিন আহমদ, দপ্তর ও পাঠাগার সম্পাদক এটিএম মোতাসিম হোসেন, সিনিয়র সহদপ্তর ও পাঠাগার সম্পাদক মোঃ সজিব মিয়া, সহ দপ্তর ও পাঠাগার সম্পাদক মোঃ তুষার, প্রচার ও যোগাযোগ সম্পাদক মোঃ শিহাব উদ্দীন, সিনিয়র সহ প্রচার ও যোগাযোগ সম্পাদক মোঃ আঃ রশিদ, সহ প্রচার ও যোগাযোগ সম্পাদক মোঃ আলমগীর, অমিন হাওলাদার ও সাগর তপদ্দার। এছাড়া কার্যকরী সদস্য ইকবাল হোছাইন ইকু, মোঃ শাহজাহান, শাহানা আক্তার সাম্মী, নূরুন নাজনীন, তাসমিনা খান (মালা), সাদিয়া আফরিন, সাংবাদিক মোঃ জসিম, মোঃ রুবেল মোল্লা, মোঃ আতিক, মোঃ রনিকুল ইসলাম, মোঃ কামরুল ইসলাম, মোঃ ইমরান, মোঃ ইব্রাহীম, মোঃ আশিক, মোঃ তফসীল, মোঃ বদরুদ্দিন শিশির, মোঃ মোস্তফা মানিক ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আইএফসি বাংলাদেশ নদী ও পরিবেশ কমিটি ঢাবি শাখার কার্যকরী কমিটির সদস্য ইকবাল হোছাইন ইকুর পরিচালনায় ও সভাপতি মোঃ মুরাদ হোছাইনের সভাপতিত্বে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের সাবেক পানি ও পরিবেশ বিষয়ক গবেষক ও আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি বাংলাদেশের সিনিয়র সহ সভাপতি ডঃ এস আই খান ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও ডেইলি নিউ নেশনের সম্পাদ মোস্তফা কামাল মজুমদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইএফসি বাংলাদেশ নদী ও পরিবেশ কমিটি ঢাবি শাখার প্রধান উপদেষ্টা, ঢাবির রাষ্ট্র-বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিএনসিসির বিটিএফও ডঃ শওকত আরা হোসেন।

http://www.facebook.com/ifcdu Image

সাংবাদিকতা-১


সাংবাদিকতা
জানার আগ্রহ মানুষের দুর্নিবার। আবার কোনো ঘটনা জেনে তা অন্যেকে জানানোর জন্য কৌতূহলী মানুষও কম নয়। তথ্য প্রযুক্তর এযুগে মানুষ চায় খুব দ্রুত তথ্য পেতে। প্রতিনিয়ত বদলে যাওয়া পরিবেশের গতি প্রকৃতি জানতে মানুষ তথ্য জানতে চায়। কিছু মনুষ আছেন যারা মানুষকে তথ্য জানানোর এ চ্যালেঞ্জিং কাজকে পেশা হিসেবে নিতে পছন্দ করেন। টেবিল চেয়ারে বন্দি নয়টা-পাঁচটার অফিস তাদের ভাল লাগেনা। তারা চান তাদের প্রতিটি দিন শুরু হোক নতুনভাবে। নতুনের সাথে পরিচয়ে। ব্যস্ততায় কাটুক প্রতিটি দিন। যাদের মধ্য আছে চ্যালেঞ্জ নেয়ার দুঃসাহস, যাদের আছে সৃষ্টিশীলতা তাদের জন্য দেশে তৈরি হয়েছে সাংবাদিকতার অনেক ক্ষেত্র। যেমন-রেডিও ও ব্রডকাস্ট জার্নালিজম সহ সকল প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়া।যাই হোক আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস সেইসব তরুণের জন্য যারা এখনও সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেয়নি। নানা কারণে হয়ত তারা সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
আমি একটি বিষয় অর্থাৎ ব্যক্তিত্ব বিকাশ লেখার পর আপনাদের ব্যপক সারা পেয়েছি তাই সময়ের চাহিদা অনুযায়ি সাংবাদিকতা বিষয়টি বেছে নিলাম। আপনাদের সারা পেলে এটিও চালিয়ে যাব।
গোড়ার কথাঃ- অনেকের মতে, প্রথম সংবাদপত্র পাওয়া যায় জুলিয়াস সিজারের আমলে খ্রিস্টপূর্ব ৫০ সালে। আর প্রথম বিলি করা সংবাদপত্রের খোঁজ পাওয়া যায় চীনে ৭৫ খ্রীস্টাব্দের দিকে। এছাড়া ঊনবিংশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের ফলে মুদ্রণ পদ্ধতির যে বিবর্তন হয় তা সংবাদপত্রকে নিয়ে যায় অন্য এক উচ্চতায়।
প্রাচীনের প্রাজ্ঞতার সঙ্গে আধুনিকের দর্শন, বৈজ্ঞানিকের জ্ঞান, নিজের ও অন্যান্য সময়ের ইতিহান, অর্থনীতির মূল শর্ত, সামাজিক-রাজনৈতিক জীবন ও চিন্তাভাবনা ও উপলব্দী এব্ং চাহিদা উপস্থাপন করাই একজন সাংবাদিকের মূল কর্তব্য।
সংবাদ কিঃ-
সংবাদ বা খবর ইংরেজীতে News। অনেক বিজ্ঞজন বলেছেন প্রধান চারটি দিক North, East, West ও South এই শব্দমালার আদ্যাক্ষর সমন্বয়ে গঠিত। সব ঘটনা সংবাদ নয়। সংবাদ একটি ছোট শব্দ হলেও এর তাৎপর্য় অনেক ব্যাপক। অভিধানে সংবাদকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে- ১.কোনো ঘটনা বা প্রস্তাব সম্পর্কিত বিবরণ।২.কোনো সাম্প্রতিক ঘটনা বা এ পর্যন্ত অজানা জিনিস সম্পর্কিত খবর বা তথ্য। ৩.চার্লস এ. ডানার ভাষায়- ইতোপূর্বে মনোযোগ আকৃষ্ট হয়নি অথচ সমাজের একটা বৃহৎ অংশকে কৌতুহলী করে তোলে এমন যে কোনো বিষয়ই সংবাদ।৪.Lord Northcliffe- If a dog bites a man, it is not news, but if a man bites a dog it is a news. এতক্ষণ বিভিন্ন সাংবাদিক ও লেখকদের দেয়া ‘সংবাদ’ এর সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করেছি। তাঁদের প্রদত্ত সংজ্ঞায় চমৎকারিত্ব, অভিনবত্ব ও নতুনত্ব রয়েছে।
মোটকথা, যা কিছু মানুষের মনে আবেক, ভয়, কান্না, হাসি, দুঃখ ও আনন্দের অনুভূতি জাগায় তাই খবর।

কিছু বিষয় আগে যেনে রাখাই ভালঃ-এবারে আপনাদেরকে কিছু গুরুত্ব পুর্ন শব্দ মালার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যেগুলো আপনার সফল সাংবাদিকতার অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করবে। যেমন, প্রত্যক্ষদর্শি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নির্ভরযোগ্য সুত্র, এলাকা বাসী, গোপন সুত্র, জানা যায়, পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অমুক সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ জানায়, সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকেই মনে করেন, এলাকা বাসীর সাথে আলাপ কালে জানাযায়, প্রত্যক্ষদর্শী(রা) জানায়/সূত্রে জানা যায়, বিএনপি/ আওমিলিগের নেতারা জানান, বিএনপি/জামাত নেতারা বলেন, একাধিক প্রার্থীর সাথে সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমারদেশ/নয়াদিগন্ত/বিডিরিপোর্ট—কে বলেন, নেতৃবৃন্দ বলেন, এলাকাবসী ও অমুক থানা সূত্রে জানা যায়, অমুক থানার ওসি মোঃ অমুক লালের কণ্ঠকে(যে কোনো পত্রিকা হতে পারে) জানান, অমুক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমুক জানান, এব্যপারে অমুক থানার ওসি অমুক বলেন, অমুক গ্রামের বাসিন্দারা জানান, পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।
উপরোক্ত শব্দমালা গুলো আপনার চলার পথে যখন তখনই প্রয়োজন হবে তাই এগুলোর যথাযথ ব্যবহার রপ্ত করুন।
একটি কথা বলে রাখা দরকার, ভারতের বিখ্যাত সাংবাদিক ও কলাম লেখক ইয়াছিন দালাল কেবল সাংবাদিকতার উপর ৬৫ টি বই লিখে জায়গা করে নিয়েছেন ‘লিমকা বুক অব ওয়ার্লড রেকর্ডস’ এ। ১৯৭৩ সালে সৌরাস্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংবাদিকতা বিভাগে যোগদানের পরই তিনি সাংবাদিকতার উপর নানা বই লিখতে শুরু করেন।

চলবে—

ক্ষুদ্রঋণ

ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি :-

সংক্ষিপ্ত ধারণাঃ- ১.প্রধান উদ্দেশ্য দারিদ্র দুর করা।

২.প্রদেয় ঋণের ৯৫% নারীদের (গ্রামীন ব্যাংক হতে ঋণ প্রাপ্তির শর্তাবলী-ক.দরিদ্র ভূমিহীন মহিলা হতে হবে। খ.বিবাহিতা হতে হবে। গ.স্থানীয় কেন্দ্রের নিকটবর্তী বাসিন্দা হতে হবে।) দেয়া হয়।

৩.কেউ ঋণ পেতে চাইলে অবশ্যই তাকে একটি গ্রুপে জয়েন করতে হবে।

৪.কোনো আইনী কাঠামোর আওতায় নয় বরং বিশ্বাসের ওপর ঋণ প্রদান করা হয়। ৫.প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি এটি প্রচ্ছন্ন একটি চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনাকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে প্রধানতম দুটি হলো-ক)গ্রামীণ ব্যাংক ও খ)ব্র্যাক।
ক্ষুদঋণ কেনো দারিদ্র্য বিমোচনে সফল হয়নিঃ- প্রফেসর শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান, অর্থনীত বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-২০০৭। প্রশ্নের উত্তরটি তার মাঠগবেষণা হতে যেসব কারণ পাওয়া গেছে সংক্ষেপে সেগুলো বর্ণনা করা হলোঃ
১.সুদের হার বেশ চড়া।(৪৭% থেকেও বেশি)
২.ঋণ গ্রহণের প্রায় অব্যবহিত পর হতেই কিস্তি প্রদান। (সুদের হার ঋণ নেয়ার প্রথম দিন হতেই গণনা শুরু হয়।)
৩.গ্রুপের একজনই ঋণ পায়, সে শোধ না করা পর্যন্ত অন্যদের অপেক্ষা করতে হয়।
৪.সংসারের অভাবের তাড়নায় প্রাপ্ত ঋণ অনেক সময়ই খাদ্য ও চিকিৎসায় ব্যয় করতে হয়।
৫.উৎপাদনশীল কাজে পেশাগত প্রশিক্ষণের অভাব।
৬.ঋণের পরিমাণ পর্যাপ্ত না হওয়া।
৭.সুদ ও ঋণ পরিশোধের পর হাতে আর পূঁজি না থাকায় পুনরায় বেকার জীবন যাপন।
৮. স্বামীদের হাতে ঋণের অর্থ তুলে দিতে বাধ্য হওয়া।
৯.অনেক সময়েই কিস্তির টাকা সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে অন্যের নিকট হতে ঋণ নেয়া।
১০.একই সঙ্গে একাধিক উদ্দেশ্যে ঋণ না পাওয়া। (অবশ্য গ্রামীণ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম)
 ক্ষুদ্রঋণ গন্তব্য থেকে বহু দূরেঃ- সীমিত আকারের কিছু সফলতা বাদ দিলে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি সত্যিকার অর্থেই তাদের গন্তব্য থেকে বহুদূরে অবস্থান করছে। যেমনি আলোচিত, তেমনি সমালোচিত ক্ষুদ্রঋণ কেনো তার লক্ষ্যে অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে তার রয়েছে নানাবিধ কারণ।

১.ঋণ গ্রহণ পরবর্তী ব্যবসা পরিচালনার জন্য তাদের কোনো প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না।

২.চরম দরিদ্র যারা ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচী তাদের পারতপক্ষে এড়িয়ে গেছে। ন্যূনতম যাদের ৫ একর জমি বা তার সমপরিমাণ অর্থ না থাকে তাকে ঋণ দেয়া হয় না।

৩.পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যারা একবার ঋণ নিয়েছে তারা স্থায়ীভাবে একটি ‘ঋণচক্রে’ জড়িয়ে পড়েছেন এবং এখন তাদের এই ঋণ ছাড়া চলে না। কিন্তু হবার কথা ছিল উল্টোটা । ৪.সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে ক্ষুদ্রঋণের ফলে। একটি শ্রেণী যারা চরম, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির বাইরে থাকার ফলে দরিদ্র এবং চরম দরিদ্রদের মধ্যে আয় বৈষম্য বাড়ছে।

৫.সবচে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি হল দরিদ্রদের সাথে ব্যবসা করে দারিদ্র্য দূর করা যাবে না। তাদেরকে সেবার মানসিকতা নিয়ে কর্মসূচি চালাতে হবে। একজন সচ্ছল ব্যক্তির চাইতেও বেশি সুদের হারে ঋণ নিয়ে কিভাবে এজন দরিদ্র ব্যক্তির জক্ষে দারিদ্র্তা জয় করা সম্ভ? -আহমেদ সাবিত-০৭

ক্ষুদ্রঋণের সমালোচনাঃ– গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দারিদ্রকে জাদুঘরে পাঠানোর যে মহান পরিকল্পনা নিয়েছেন তাতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণ-তত্ত্ব দিয়ে দারিদ্র বিমোচনের অলীক স্বপ্ন ধোপে টেকে না। প্রথম আলোর গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন- ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার নয়। মোস্তফা কে মুজেরী বলেন,বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলে ক্ষুদ্রঋণকে বাইরে রাখছি। অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ক্ষুদ্রঋণ দিয়েই শুধু দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। বানিজ্যিক ব্যাংকের সবচেয়ে বড় উদাহরণ তো গ্রামীণব্যাংক, ২৬-৪০% চড়াসুদে মুনাফা লোটার পরেও বলতে চান, ডঃ ইউনূস বানিজ্যিক নন ? যথার্থ শিক্ষার মাধ্যমে নারী স্বাবলম্বী হবে যা নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নের পথ সুগম করবে, অশিক্ষিত নারীকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এবং অযাচিতভাবে ডিরেক্টর বানিয়ে নারীর প্রকৃত মুক্তি কখনোই আসবেনা। সাধারণ জনগণের অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে আমাদের শিক্ষিত জ্ঞানপাপী বুদ্ধিজীবীরা আইন বহির্ভূত যা খুশী তাই বলে আর কতকাল এভাবে লোক ঠকাবেন ? ডঃ ইউনূস তার নেটওয়ার্কিং বুদ্ধির জোরে পশ্চিমা বিশ্বে একটি শক্ত অবস্থান গড়তে সক্ষম হয়েছেন, তার পলিটিক্যালি শক্তিশালী বন্ধুগুলোর ভূমিকাই তাকে নোবেল এনে দিয়েছে,এই যুগে কুষীদজীবীরা নোবেল পুরষ্কার পাচ্ছেন,পরবর্তী যুগে হয়ত আলু পটল ব্যবসায়ী কিংবা মুদি দোকানদারেরাও নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাবেন,অবাক হওয়ার কিছু নেই,কারণ এই পুরষ্কারের পেছনে পশ্চিমা রাষ্ট্রের শক্তিশালী নেতাদের হাত থাকে তাই কোন মুদি দোকানদার যদি বিল ক্লিনটনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেন এবং বিদেশী স্বার্থ রক্ষা করে চলতে পারেন তাহলে তিনিও একদিন অমন পুরষ্কারের আশা করতে পারেন । এটা কি দেবদেবী শাসিত গ্রীক সাম্রাজ্য কিংবা যাজক শাসিত রোমান সাম্রাজ্য যে ইউনূস সাহেবের অসীম ক্ষমতা থাকবে ? বাংলাদেশের মত গনতন্ত্রকামী একটি দরিদ্র দেশে ইউনূস সাহেবের মত কিছু রক্তচোষা ভ্যাম্পায়াররা বছরের পর বছর বিপুল এক জনগোষ্ঠীকে ঋণের জালে জড়াবে এবং তাদের থেকে চড়া সুদ গ্রহণ করে বিশাল অঙ্কের মুনাফা লুটেই যাবে,এতবড় অন্যায় কখনোই মেনে নেওয়া যায়না। এম এম আকাশের মতে, “ক্ষুদ্রঋণ একটি লোভনীয় ব্যবসায় রূপ নিচ্ছে। কেউ যদি বলে,আমি ব্যবসা করে মুনাফা করব,তবে তাকে কর দিতে হবে”। সুদ সমেত আসল না পেলে আপনার ব্যাঙ্কের কর্মকর্তারা গরীব ঋণগ্রহীতার গরু-বাছুর আসবাবপত্র হাড়িপাতিল টিনের চালা এমনকি নাক-ফুল কিংবা গলায় পরার সাধারণ অলঙ্কারাদি খুলে নিয়ে যায়,এর পেছনে কি আপনার কোনই গুপ্ত নির্দেশনা নেই ? ১৯৭১ সালে বিদেশে ছিলেন তিনি,দেশের জনগণ যখন মহান মুক্তিযুদ্ধের মহাসংগ্রামে লিপ্ত,তখন উনি ব্যস্ত ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী নিতে। জীবনে কোনোদিন অন্যায় অত্যাচার অবিচারের বিরুদ্ধে উনি সোচ্চার হয়ে সামনে দাঁড়িয়েছেন ? প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ – রাজনীতিবিদ ডঃ শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের পরে ডঃ ইউনূসের ন্যক্কারজনক নীরবতা জনমানসে প্রশ্ন তোলে। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে নীরব ছিলেন,স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় নীরব ছিলেন,কানসাট –মঙ্গা সহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সময় ইউনূস সাহেবের নীরব অবস্থান এটাই প্রমাণিত করে যে,উনি নিজের ব্যক্তিগত লাভ কিংবা সাফল্য ব্যতীত জীবনে আর কোনকিছু দেখার প্রয়োজন বোধকরেননি।
এবার আসা যাক একটু ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে

 ডঃ ইউনূস তনয়া দীনা ইউনূসের অতিবিলাসী এবং অসংযত জীবনযাত্রার কুরুচিপূর্ণ ছবি যারা সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুকে দেখেছেন,তাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে যে,বাবা হিশেবে ডঃ ইউনূস কতটুকু সার্থকভাবে তার দায়িত্ব পালন করেছেন ? বাংলাদেশের মত দরিদ্র দেশে যেখানে গরিবের দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটেনা,সেখানে ইউনূস তনয়ারা লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে এদেশ ওদেশ ঘুরে বেড়ান,ব্যাংকক –সিঙ্গাপুর –ইউরোপ –আমেরিকায় শপিংয়ে যান ;যেই ব্যক্তি সারাদিন গ্রামীণ ফতুয়া পরে থাকেন,তারই কন্যার কেন বিদেশী কুরুচিপূর্ণ পোশাকের প্রতি এত ঝোঁক ? তার মানে কি গ্রামীণ চেক বন্দনা শুধুই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ? গ্রামীনব্যাংকের উচ্চ সুদের ঋণ,গ্রামীণ ফোনের উচ্চ কলরেট,গ্রামীণ চেকের উচ্চমূল্য সচেতন জনগণ আর বেশিদিন সহ্য করবেনা,অচিরেই তারা বিকল্প কোম্পানিগুলোর দিকে ঝুঁকবে এবং উচ্চমূল্যের গ্রামীনপণ্য বর্জন করা শুরু করবে।
Sat, 09/04/2011 – ডঃ মুশফিক dr_mushfique@yahoo.com
সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক রাহাত খান, তিনি ‘ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নন’ শীর্ষক কলামে বলেছেন- ‘দেশের প্রচলিত আইন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবিধান ও তদারকির আওতায় একটি বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে ড. ইউনূসকে প্রতিষ্ঠাতা বলা যায় না। তবে তাকে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর পর্যন্ত বলা যেতে পারে। … … তার অবর্তমানে নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্রে তার কার্পণ্য লক্ষণীয়। অনেকেই মনে করতেন, দীপাল বড়ুয়া অথবা খালেদ সামস্ তার পরে এমডি পদে অধিষ্ঠিত হবেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে উভয়কে সরিয়ে দেয়া হয়। বহির্দেশীয় ব্যবসায়ীদের তার প্রতি আকর্ষণের মূলে রয়েছে ব্যবসায়িক স্বার্থ। যেমন- গ্রামীণ ব্যাংককে কো-লেটারাল বা ইক্যুইটি দিতে হয় না। ট্যাক্স দিতে হয় না। তিনি শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, কিন্তু উচ্চহারের সুদের বিনিময়ে ঋণ দিয়ে কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেন তা বিবেচনার দাবি রাখে।
এনজিও সমূহের বিরোধিতাঃ- বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাস্তিক বুদ্ধিজীবী ডঃ হুমায়ুন আজাদের ইন্টারভিউ।
অরনি অনুপ শাদীঃ এনজিও সমূহ বা গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ডকে আপনার কাছে কেমন লাগে ?
হুমায়ূন আজাদঃ- বাংলাদেশ এখন এনজিওতে ভরে গেছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ গেলে,আমি গত বছর বেড়াতে গিয়েছিলাম, পথে প্রান্তে রাস্তার পাশে পুকুরের ওপর বাড়ির ওপর টিনের ঘরে চমৎকার দালানে গাছের উপরে সমস্ত এনজিওরা দিনরাত কর্মব্যস্ত। আমি অবশ্য কাজ দেখিনি কিন্তু তাদের ঘরবাড়ি সাইনবোর্ড দেখেছি এবং তারা পুরষ্কারের পর পুরষ্কার পাচ্ছে। তারা বাংলাদেশী রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার পাচ্ছে, ম্যাগসেসাই পাচ্ছে, পুরষ্কারে ভরে গেছে। কিন্তু এতো এনজিও, এগুলো যদি কোন কাজ করতো,তবে বাংলাদেশে তো এখন সুখ এবং শিক্ষার প্লাবন বয়ে যেত। বছর দশেক আগে সম্ভবত একদল এনজিওর লোক আমার কাছে এসেছিল, তারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করে, ……বোধ হয় তখন আড়াইশোর মত এনজিও শিক্ষা নিয়ে কাজ করছিল, তো আমি বলেছিলাম আপনারা কি করেন, বলেছিল আমরা শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি। আড়াইশো এনজিও যদি শিক্ষা নিয়ে কাজ করে তাহলে বাংলাদেশে সবাই শিক্ষিত হয়ে যাওয়ার কথা। তারা কতগুলো বই ছেপেছে, সেই বইগুলো আমাকে দেখালো, অত্যন্ত নিম্নমানের বই, এবং আমি অনেক এনজিওর স্কুলেও গেছি, কোন ছাত্র নেই, কোন লেখাপড়া নেই। সবচেয়ে প্রধান এনজিও এবং সবচেয়ে যা হাস্যকর সেটি হচ্ছে গ্রামীণব্যাংক। ব্যাংক এমন কিছু মহাগৌরবের হতে পারেনা। যদি আমরা গ্রামীণব্যাংক প্রধানকে দিনরাত পুরষ্কার দিতে থাকি তাহলে অগ্রণী ব্যাংকের প্রধানকে, সোনালী ব্যাংকের প্রধানকে, কৃষি ব্যাংকের প্রধানকেও দিতে পারি। এটি এমন কি আহামরি যে এটিকে নিয়ে এতো মেতে থাকতে হবে ? আমি লক্ষ্য করেছি যে, এই ব্যাংকটি একব্যক্তিকেন্দ্রিক, তার মহিমা প্রচার করাই হচ্ছে এই ব্যাংকটির কাজ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে তার পুরষ্কার পাওয়া, তার জীবনীর আত্মপ্রচার করা এবং যত রকম মহিমা তাকে এনে দিতে হবে – সে বোধ হয় মহিমালুব্ধ মানুষ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং আমি ইতোমধ্যে অনেকগুলো গ্রামীণ ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা আমাকে বলেছে স্যার আমরা তো পাগল হয়ে গেলাম। একজনের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে, কারণ ঐ লোকটি সকালবেলা হোন্ডা করে গিয়ে শুধু হানা দেয় টাকা তোলার জন্য যাদেরকে ঋণ দেওয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকে, বলেছে এমনভাবে, যাচ্ছি এবং যাচ্ছি এবং যাচ্ছি যে আমার পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আরেকজন ভদ্রমহিলা তার স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে কারণ তার স্বামী ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে উন্মাদ হয়ে গেছে, ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে এখন বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে, এটি উত্তরবঙ্গের ঘটনা। এবং যেভাবে গ্রামীণ টাকা আদায় করে তাতে আমার মনে হয়, এই ব্যাংকের যিনি প্রধান তিনি একজন কাবুলিওয়ালায় পরিণত হয়েছেন, যে ডঃ ইউনূস এখন ইউনূস কাবুলিওয়ালায় পরিণত হয়েছেন । এই পুরষ্কার থামাতে হবে। এতো পুরষ্কার এতো ইংরেজি এবং জার্মান ভাষায় আত্মজীবনী একটা ব্যাংকের প্রধানের কাছে আমরা চাইনা। এবং আসলে যে- কাজগুলো হচ্ছে তা দালালি হচ্ছে। মনে করা যাক, গ্রামীণব্যাংক জনগণের কল্যাণই যদি করতে চায়, ওর মোবাইল ফোনের ব্যবসার কি প্রয়োজন ? মোবাইল ফোনের ব্যবসা করার জন্য আরো অনেক মানুষ রয়েছে। সমাজকল্যাণের জন্য যে সংস্থাটি কাজ করছে তার মোবাইল ফোনের ব্যবসা করা চলেনা। এমনকি আমি অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটি বিজ্ঞাপন দেখেছি, বিজ্ঞাপনে বলছে, আপনারা ডেঙ্গুজ্বরের খবরটি গ্রামীণ মোবাইলে জানান । মানুষ অসুস্থ হচ্ছে ডেঙ্গুজ্বরে, তারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে গ্রামীণ মোবাইলে ডেঙ্গুজ্বরের খবরটি জানান, আমি অবশ্য অবিকল বলতে পারলাম না, তবে আমি এরকম দেখেছি। ফলে এটি একটি কাবুলিওয়ালার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং এর প্রধান কাবুলিওয়ালা শুধু পুরষ্কার পাচ্ছে। ……গ্রামীণব্যাংক মহিলাদের নামে টাকা দেয় এবং মহিলাদের চুল ধরে টেনে তাকা আদায় করে আনে। আমরা কাবুলিওয়ালার কথা জানতাম, আঙুর পেস্তা বাদাম বিক্রি করতো এবং টাকা সুদে ধার দিতো, তাদের মতই ডঃ ইউনূস এখন ইউনূস কাবুলিওয়ালা হয়ে গেছেন।…এতো পুরষ্কার, আমার ঘেন্না ধরে গেছে। এবং আমি তার দু একটি লেখা পড়ে দেখেছি, এগুলো অত্যন্ত তুচ্ছ লেখা।
ভোরের শিশিরঃ মার্চ ২০০৪ (একুশ আমাদের অঘোষিত স্বাধীনতা দিবস পৃষ্ঠা-১৪৪-১৪৫)